কারাগারগুলোতে বাংলাদেশের যে চেহারা দেখা যায়
দীর্ঘ ২৭ বছর কারাবন্দী থাকা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, কোনো দেশের কারাগারের ভেতরে না যাওয়া পর্যন্ত সে দেশ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা যায় না। কোনো দেশকে বিচার করতে হলে, দেশটি উঁচুতলার নাগরিকদের সঙ্গে কী আচরণ করে তা দিয়ে নয়, নিচুতলার নাগরিকদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করে, তা দিয়ে বিচার করতে হবে।
ম্যান্ডেলার কথামতো আমরা যদি বাংলাদেশের কারাগারগুলোর আয়নায় দেশের পরিস্থিতি বিচার করতে যাই, তাহলে এক ভয়ংকর অমানবিক চিত্রই সামনে চলে আসে। দেশের কারাগারগুলো ধারণক্ষমতার অধিক বন্দী দিয়ে ঠাসা। বন্দীদের ঘুমানোর জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় জায়গাও কারাগারগুলোতে নেই। আছে আলো–বাতাসের অভাব, চিকিৎসার ব্যবস্থার অভাব ও পর্যাপ্ত শৌচাগারের অভাব।
এমনিতে বন্দী দিয়ে ঠাসা কারাগারগুলোতে সাম্প্রতিক কালে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার বন্দীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে।
প্রথম আলোর সংবাদ অনুসারে, দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দী ধারণক্ষমতা প্রায় ৪৩ হাজার হলেও ৫ নভেম্বর পর্যন্ত পাওয়া হিসাবে বন্দী আছেন প্রায় ৮৮ হাজার জন। এ বছরের সেপ্টেম্বরেও বন্দী ছিলেন ৭৭ হাজার। বিভিন্ন মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের মধ্যে গত দুই মাসে বন্দীর সংখ্যা বেড়েছে ১০ হাজার ৬০৯। ফলে কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বা তিন গুণ পর্যন্ত বন্দী রাখতে হচ্ছে।
যেমন ঢাকা বিভাগের কারাগারগুলোর ধারণক্ষমতা ১৩ হাজার ৪২১ হলেও বন্দীর সংখ্যা ৩০ হাজার ৮১১, অর্থাৎ একজন বন্দী রাখার মতো জায়গায় রাখা হচ্ছে ২ দশমিক ৩ জনকে। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ হাজার ৯৫০ জনের ধারণক্ষমতার বিপরীতে বন্দীর সংখ্যা ১৭ হাজার ২৩৫। সেখানে একজন বন্দীর জায়গায় রাখা হচ্ছে ২ দশমিক ৪৭ জনকে। রাজশাহীর কারাগারগুলোতে রাখা হয়েছে ১ জনের জায়গায় ৩ জনের বেশি বন্দী।