নিজ ঘরেও কেন অনিরাপদ নারীরা?

জাগো নিউজ ২৪ মাহফুজা অনন্যা প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১২:০৮

কেয়া নামের একজন সুন্দরী তরুণী। বয়স মাত্র পঁচিশ। স্বপ্ন ছিল ছোট্ট সংসার গড়ে তোলার, হাসিমুখে দিন পার করার। কিন্তু সেই স্বপ্নের আঙিনা পরিণত হলো রক্তাক্ত ঘরে—যেখানে স্বামীর হাতে নিজের জীবনটাই হারাতে হলো তাকে। হত্যার পর ঘাতক স্বামী পালিয়ে গেছে, রেখে গেছে এক গভীর শূন্যতা, কয়েক ফোঁটা প্রশ্নচিহ্ন, আর এক মর্মন্তুদ সংবাদ যা তার সন্তানদের জন্য অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ!


প্রশ্ন জাগে—সংসার নামের যে জায়গাটি নারীর নিরাপদ আশ্রয় হওয়ার কথা, সেটি কবে থেকে হয়ে উঠল মৃত্যুকূপ? এই হত্যাগুলোর পেছনে কারণ প্রায় একই: যৌতুক, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, অর্থনৈতিক টানাপড়েন, কিংবা পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যের মানসিকতা। আইনের শাসন দুর্বল, বিচার প্রক্রিয়া ধীর, আর সামাজিক নীরবতা এই অপরাধকে আরও প্রশ্রয় দিচ্ছে। ফলে নারীর জীবন হয়ে উঠছে সবচেয়ে সস্তা বিনিময়ের উপাদান। আরও ভয়ংকর সত্য হলো—মানুষ এসব হত্যার খবরে খুব দ্রুত অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে! সংবাদপত্রে পড়ে, দু-একজন প্রতিবাদী কণ্ঠ উচ্চারিত হয়, তারপর নিস্তব্ধতা। কিন্তু সমাজের এই নীরবতাই ঘাতকদের আরও সাহসী করে তোলে।


সংবাদপত্রের একটি সংখ্যা কেবল পরিসংখ্যান নয়, বরং প্রতিটি সংখ্যার পেছনে রয়েছে অকালপ্রয়াণ, ভাঙা পরিবার, অনেকগুলো নিঃস্ব সন্তান। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে বাংলাদেশে মাত্র ৭ মাসে ১১৩ জন নারী খুন হয়েছেন তাদের স্বামীর হাতে। ভাবুন, মাসে গড়ে ১৬ জন অর্থাৎ প্রায় প্রতি দু’দিনে একজন নারী স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন!


নারীর প্রতি সহিংসতা শুধু একটি পারিবারিক সমস্যা নয়; এটি জাতীয় সংকট। কারণ, একজন নারী খুন মানে কেবল একটি প্রাণহানি নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর আঘাত। একজন নারী খুন হলে সন্তান হারায় মাকে, পরিবার হারায় মেয়েকে, সমাজ হারায় তার অর্ধেক শক্তিকে। এজন্য আমাদের জানতে হবে—কেন এত আইনি কাঠামো থাকা সত্ত্বেও নারী হত্যা থামছে না? কেন পুলিশি তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া বছরের পর বছর ঝুলে থাকে? কেন পরিবার ও সমাজ এখনও ‘ঘরোয়া বিষয়’ ভেবে চুপ করে থাকে?


নারী কেবল স্ত্রী, মা, বোন বা কন্যা নয়—সে একজন স্বাধীন মানুষ। তার জীবন, তার অস্তিত্ব রাষ্ট্রের কাছে সর্বোচ্চ মূল্যবান হওয়া উচিত। যদি এ দায় আমরা এড়িয়ে যাই, তবে প্রতি মাসেই নতুন নতুন কেয়া, রূপা, শিলা কিংবা শিউলির রক্তে ভিজবে সংবাদপত্রের পাতা। আজ প্রয়োজন শক্ত আইন প্রয়োগ, দ্রুত বিচার, এবং সর্বোপরি সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তন। নারী হত্যাকে “ঘরোয়া ঘটনা” নয়, “জাতীয় অপরাধ” হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। না হলে ইতিহাস শুধু মনে রাখবে—৭ মাসে ১১৩ নারী খুন, আর আমরা দেখেও চুপ করে ছিলাম।


আমরা প্রায়ই দেখি—সংবাদপত্রের এক কোণে ছোট্ট একটি শিরোনাম: “স্ত্রী খুন স্বামী পলাতক”! প্রথমে অবাক হই, তারপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাই। যেন এ সব খবর আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু এই অভ্যস্ততা আসলে খুব ভয়ংকর। আমরা ভুলে যাই, প্রতিটি হত্যার পেছনে কয়েকটি পরিবার, অকালপ্রয়াণ, আর একটি সমাজব্যবস্থার ব্যর্থতা লুকিয়ে থাকে। কেয়ার মৃত্যু কেবল একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়; এটি নারীর নিরাপত্তাহীনতার নগ্ন চিত্র। ঘর, যা হওয়া উচিত ছিল আশ্রয়স্থল, সেখানে রক্ত ঝরে—এ কেমন সমাজ? সংসারে দ্বন্দ্ব, অভিমান কিংবা মতবিরোধ স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু সেই দ্বন্দ্ব যদি হত্যার মতো নির্মমতায় পৌঁছায়, তবে বুঝতে হবে—আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আইনি কাঠামোতে ভয়াবহ শূন্যতা রয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও