বাজারব্যবস্থায় মাফিয়াতন্ত্র
এই ভরা মৌসুমেও চালের বাজারে যে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে, তা কোনোক্রমেই প্রত্যাশিত নয়। কৃষকপর্যায়ে ধানের যে মূল্য আর ভোক্তাপর্যায়ে চালের যে বাজারমূল্য—এই দুইয়ের মাঝে অনেক ব্যবধান। একেবারেই সাধারণ মানের মোটা চালের দাম কেজি ৫০ টাকার কম নয়। একটু উন্নত মানের চাল কিনতে হলেই কেজিপ্রতি গুনতে হয় ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
গত বছরের তুলনায় এ বছর এই মূল্যবৃদ্ধি ক্ষেত্রবিশেষে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। আমাদের সমাজব্যবস্থায় অথবা আর্থিক খাতে এমন কোনো উন্নতি হয়নি যে আমাদের আয় এক বছরের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চালের উৎপাদন খরচ এই এক বছরের মধ্যে ৩০-৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়। সার-কীটনাশকসহ সেচের খরচ ততটা বৃদ্ধি পায়নি। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। এরপরও বাজারের এই অবস্থা কেন, তা বিশ্লেষণ করতে হবে।
এখানে চালকলমালিকেরা এবং যাঁরা ধান-চাল মজুত করেন, তাঁরা আগের মহাজনিব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে মৌসুমের শুরুতেই সস্তায় ধান কিনে মজুত করেন। আমাদের ভোক্তাদের জিম্মি করে আস্তে আস্তে এই চাল বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে অধিক মুনাফা করেন। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে, একচেটিয়াভাবে সারা দেশে হাতে গোনা দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ এ কাজটি করেন, আমাদের সবার চোখের সামনে। এখানে রাষ্ট্রীয় তদারকি সংস্থা খুব একটা তাঁদের সঙ্গে পেরে উঠছে না।
এই ব্যবস্থা ভাঙার জন্য রাষ্ট্রের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কৃষকপর্যায়ে রাষ্ট্রকে আরও ছাড় দিতে হবে। কৃষক যেন তাঁদের উৎপাদিত ধান তিন-চার মাস সংগ্রহে রাখতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। স্বল্প সুদে অথবা বিনা সুদে তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের যে দাম হয়, সেই পরিমাণ টাকা ঋণ দিতে হবে। আরও ঋণ দিতে হবে একবারে, যেন তাঁরা ধান সংগ্রহ করতে পারেন, সে রকম অবকাঠামোর জন্য। এটা হতে হবে অল্প সুদে অথবা শূন্য সুদে।
ধরুন একজন কৃষক এক শ মণ ধান উৎপাদন করেন। তাঁর নিজের জন্য ২০ মণ রেখে অন্য ৮০ মণ ধান যেন তিনি তাঁর নিজের বাড়িতে সংগ্রহ করে রাখতে পারেন। নিজের সাংসারিক ব্যয় ও কৃষিকাজ মেটানোর জন্য চার মাসের মধ্যে তিনি আস্তে আস্তে ৮০ মণ ধান বিক্রি করবেন। এই ৮০ মণ ধান যেন তিনি আস্তে আস্তে বিক্রি করতে পারেন প্রয়োজন অনুসারে, সেভাবে তাঁকে ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ দিতে হবে। উৎপাদন পর্যায়ে কৃষকদের এই প্রণোদনা দিতেই হবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বাজার ব্যবস্থাপনা