কষ্টের নতুন নাম ‘বাজারকষ্ট’
এই বাংলায় এক টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত, ইতিহাসের পাঠ না নেওয়া মানুষও এমন তথ্য জানেন। ৮০ টাকায় এক কেজি আলু কেনা বর্তমান সময়ের মানুষ হয়তো সেই সময়ের কথা স্বপ্নে দেখারও সাহস করবেন না। কিন্তু মোগল আমলে বাংলার সুবেদার বা প্রাদেশিক শাসক শায়েস্তা খাঁর আমলে মানুষ এক টাকায় আট মণ চাল কিনেছে। দুই দফায় ২২ বছর বাংলা শাসন করেন শায়েস্তা খাঁ। প্রথমে ১৬৬৪ থেকে ১৬৭৮ সাল এবং দ্বিতীয়বার ১৬৮০ থেকে ১৬৮৮ সাল।
শায়েস্তা খাঁর আমলের বাজারদর ২০২৩ সালে বাংলার মানুষের কাছে নিশ্চয় এক বিস্ময়। অনেকটা সময় কেটে গেছে। পরিবেশ, পরিস্থিতি ও পদ্ধতি পাল্টেছে। এখন মূল্যস্ফীতি ও টাকার অবমূল্যায়নে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। এক ধরনের অনিশ্চয়তা নিয়ে কাটছে সময়। এমন পরিস্থিতিতে দেশের একটা বিশাল অংশের মানুষের মনে স্বস্তি নেই। জীবন চালাতে গিয়ে গভীর সংকটে পড়েছেন মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দিন দিন বেড়ে চলেছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে। দেখার যেন কেউ নেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, গত অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ (প্রথম আলো, ৭ অক্টোবর, ২০২৩)।
নিত্যপণ্য বিশেষ করে চাল, ডাল, সবজি, মুরগির মাংস কিংবা ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে দু-এক দিন পরপরই রাজনীতির মাঠ গরম হয় সিন্ডিকেট নামের এক ‘ক্ষমতার কুণ্ডলি’ নিয়ে। সেই রাহুগ্রাস থেকে বেরিয়ে আসতে বাইরের দেশ থেকে আমদানি করার পদ্ধতি বাতলে দেন আমাদের ‘মনিবরা’। তাতে তো দাম কমে না, উল্টো বেড়ে যায়। এতে তারা ব্যর্থ হয়ে মুরগির ডিম পাড়ার ঋতুর গল্প আমাদের সামনে হাজির করেন। সেই গল্পে তো আর সাধারণ মানুষের পেট ভরে না।
তুরস্কের ওসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রভাবশালী শাসক সুলতান সুলেমানের শাসনামল নিয়ে একটি টিভি ধারাবাহিক বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পেয়েছে। ‘সুলতান সুলেমান’ নামের সেই ধারাবাহিক বাংলাদেশের টিভিতেও প্রচার হয়। সেখানে দেখা যায়, বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও তদারক করেন শাসকরা। সুলতান সুলেমান ছদ্মবেশে বাজারে যান, নিত্যপণ্যের দাম পর্যবেক্ষণ করেন। এমনকি রাষ্ট্রের প্রধান হাকিমও বাজারে গিয়ে পণ্যের দাম জানেন। কেউ অনিয়ম করলে কিংবা বেশি দাম রাখলে সঙ্গে সঙ্গে জেল-জরিমানা ও শাস্তি দেন।