কিম-পুতিনের আলিঙ্গনে কী বার্তা?
২০২১ সালের জানুয়ারির শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে সাবধান করে বলেছিলেন, পুতিন যদি ইউক্রেনে হামলা করেন, তাহলে রাশিয়ার ওপর আরও কঠিন অবরোধ আরোপ করা হবে, যা মস্কোর জন্য মোটেও ভালো হবে না। কিন্তু পুতিন সে ভয়ডরকে পাত্তা দেননি। এরপর যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপিয়ান মিত্র দেশগুলো ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে রাশিয়াকে অধিকতর ভয়ডর দেখিয়ে তাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। পুতিন এমন একজন নেতা, যিনি গত কয়েক বছরে যা কিছু করেছেন, তার উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়া এখনো সুপার পাওয়ার এবং দেশটিকে ভয় ও সম্ভ্রমের চোখে দেখতে হবে এই বার্তা দেওয়া।
কিম-পুতিনের আলিঙ্গন মনে করায় যে সমরাস্ত্রের জন্য রাশিয়ার কাছে এখনো বিকল্প আছে। কিন্তু বিকল্পগুলোও দুর্বল, যেমন উত্তর কোরিয়া ও ইরান। কিম-পুতিন-ব্লোফেল্ডের এই সাক্ষাতের একটি দিক হলো এ বৈঠকে চীনের নেতা শি জিনপিংকে যুক্ত করা হয়নি। চীন রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহের আহ্বান বরাবরই এড়িয়ে চলেছে। ইউক্রেনে গত ফেব্রুয়ারিতে পুতিনের আগ্রাসনের পর চীন-রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ে। কিন্তু এর মধ্যে সামরিক পণ্য কেনাবেচার কোনো ব্যাপার ছিল না। এটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ২০২২-এ পুতিনের ইউক্রেন দখলের মাত্র তিন সপ্তাহ আগে রাশিয়ার নেতারা বেইজিংয়ে যান এবং একটি দীর্ঘ যৌথ বিবৃতিতে তারা অবারিত অংশীদারত্বের প্রতিশ্রুতি দেন। ওই বিবৃতিতে তারা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ঘোষণা করেন এবং পশ্চিমা নীতি ও বৈশ্বিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, সেগুলোর প্রভাব নিঃশেষ করে দেওয়ার কথা বলেন। তবে এই যে যৌথ বিবৃতিতে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে নাক না গলানো কিংবা জোরজবরদস্তির বিরুদ্ধে কথা বলা হলো, তার কিছুদিন বাদেই রাশিয়া ইউক্রেনে হস্তক্ষেপ করে। এর অর্থ দাঁড়ায়, চীন ও রাশিয়া যে দেশগুলোকে নিজেদের বলে দাবি করে, সেসব দেশে হস্তক্ষেপ করার অধিকার তাদের আছে। ইউক্রেনের জন্য দেশটির নাম রাশিয়া আর চীনের জন্য তাইওয়ান। সেদিক থেকে চীনের জন্য ইউক্রেন ছিল প্রক্সি ওয়ারের মতো। কিন্তু তারপরও চীন এখনো এই যুদ্ধে সরাসরি জড়ায়নি। রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির অংশীদারত্ব এখনো সীমার ভেতরেই আছে। সমরাস্ত্র বা যুদ্ধের রসদ জোগানো পর্যন্ত গড়ায়নি।