শিশুর শারীরিক শাস্তির দেশীয় ট্র্যাজেডি
শিশুর শারীরিক শাস্তি বিষয়ে ২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সমকালে লিখেছিলাম– উপমহাদেশীয় ট্র্যাজেডি। ভারতে এক মা তাঁর সন্তানকে পড়ানোর সময়কার শাসানি আর মারের এক ভিডিও তখন ভাইরাল হয়। সেটিই ছিল ওই লেখার উপলক্ষ। তবে আজকের বিষয় দেশীয় ট্র্যাজেডি। বাড়িতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিংবা কর্মস্থলে এমনকি রাস্তাঘাটেও আমাদের কোমলমতি শিশুরা যেভাবে শারীরিক শাস্তির শিকার হয় সেটি এক ট্র্যাজেডিই বটে। এ প্রেক্ষাপটেই শিশুর শারীরিক শাস্তির বিলোপ সাধনে প্রতি বছর ৩০ এপ্রিল পালিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে টু এন্ড করপোরাল পানিশমেন্ট’।
অস্বীকার করা যাবে না, সরকারি পরিপত্র ছাড়াও এ নিয়ে নানা মহল সোচ্চার থাকায়, আমাদের দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুকে শাস্তি দেওয়ার হার ও প্রবণতা উভয়ই কিছুটা কমেছে। ২১ এপ্রিল ২০১১-এ প্রকাশিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে শারীরিক ও মানসিক শাস্তির বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে বলা আছে। সেখানে বিশেষ করে ১১ ধরনের শারীরিক শাস্তি এবং ২ ধরনের মানসিক শাস্তি যেভাবে বলা আছে তাতে বলা চলে সব বিষয়ই এসেছে। এরপর দেখা গেছে, শিক্ষক অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিপীড়নমূলক শাস্তি দিলে, তা খবর হিসেবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়। প্রশাসন তৎপর হয় এবং অনেক শিক্ষকের গ্রেপ্তারের খবরও আমরা দেখেছি।
এটা সত্য, একটা সময় অভিভাবকরাই চাইতেন শিক্ষক যেন তাঁর সন্তানকে পিটিয়ে ‘মানুষ’ করেন। তবে অভিভাবকদের মানসিকতায়ও পরিবর্তন এসেছে। এখন কোনো শিক্ষক সন্তানকে পেটালে অভিভাবকরাই এর প্রতিবাদ জানান। তারপরও দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, এখনও অনেক শিক্ষক অসচেতন। এখনও অনেক অভিভাবকের মধ্যেও পুরোনো সেই ধ্যান-ধারণা রয়ে গেছে। যে কারণে শিশুর নির্যাতনের ব্যাপারে বিভিন্ন জরিপে যেসব তথ্য উঠে এসেছে সেগুলো ভয়াবহতারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। গত বছরের মাঝামাঝিতে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) ও ইনসিডিন বাংলাদেশ পরিচালিত জরিপের তথ্য সমকালে প্রকাশ হয়। সেখানে দেখানো হয়েছে, শতকরা ৯৫ দশমিক ৮ ভাগ শিশু ঘরেই নানাভাবে নির্যাতিত হয়। এর মধ্যে বাবা-মা ও অভিভাবক দ্বারা সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয় শিশুরা।