নিউ ইয়র্ক নয়, ঢাকায় হলে মামদানি তিন ভোট পেতেন
জোহরান মামদানি নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আঁচ আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে ঠেকেছে। সাধারণ মানুষ তাকে নিয়ে বন্দনায় মেতেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে মূলধারার সংবাদমাধ্যম সর্বত্র এখনও সেই মাতামাতি চলছে।
কিন্তু মামদানি যদি বাংলাদেশের ঢাকা উত্তর বা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কোনো একটিতে নির্বাচন করতেন, তাহলে কী হতে পারত? নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক, এই ভাবনাটা ভাববার জন্য আমাদের ধরে নিতে হবে, মামদানির ভারতীয়-পাঞ্জাবি মা মীরা নায়ার এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত উগান্ডান বাবা মাহমুদ মামদানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহর নিউ ইয়র্কের পরিবর্তে তাদের ছোট্ট ছেলে জোহরানকে নিয়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বসবাস করতে এলেন। পরে মীরা যথারীতি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বিখ্যাত হলেন, মাহমুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। জোহরানও এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে রাজনীতিতে যোগ দিলেন। এর মাঝে পড়তে গিয়েছিলেন আমেরিকায়। সেখানে কোনো একটা ডেটিং অ্যাপে তার পরিচয় হলো রামা দুয়াজি নামে এক নারীবাদী সিরীয়-মার্কিন চিত্রশিল্পীর সঙ্গে। তারা বিয়ে করলেন। বিয়ের পর দুজনই চলে এলেন ঢাকায়।
ঢাকায় ফিরে জোহরান মামদানি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মতো টুকটাক আন্দোলন, পোস্টারবাজি, সেমিনারে বক্তৃতা—সব ঠিকঠাক চালিয়ে যাচ্ছেন। তারপর হঠাৎ একদিন তার মনে হলো নির্বাচন করবেন এবং ঘোষণা করে দিলেন তিনি সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন।
ভাবনাটা একটু কষ্টকল্পনা হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে জোহরান মামদানির জায়গাই হতো না। কারণ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনটা বেশ জটিল, এখানে মাহমুদ মামদানি ও মীরা নায়ারের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ নেই। তার চেয়ে বরং আমরা ধরে নিই, মাহমুদ মামদানি পুরান ঢাকার ছেলে। মীরার পদবি নায়ার নয় মার্ডি। তিনি দিনাজপুরের সাঁওতাল আদিবাসী। তারা পড়াশোনা করে, সিনেমা বানিয়ে নিজ নিজ নামে বিখ্যাত হয়েছেন এবং তাদের ছেলে জোহরান মামদানিও রাজনীতিতে কিছুটা নাম কামিয়েছেন।
তাহলে কি হতে পারত জোহরান মামদানির নির্বাচনটা? আদৌ বড় কোনো দল থেকে মনোনয়ন পেতেন তিনি? মা-বাবা ও স্ত্রীর পরিচয়ের কারণেই পেতেন না। এখানে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কোনো প্রাইমারিতে ভোট করতে হয় না, দলের সর্বোচ্চ নেতার ইচ্ছেই মনোনয়ন পাওয়ার জন্য যথেষ্ট এবং শেষ কথা।
জোহরান মামদানির মা মীরা ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছেন, এমন কোনো তথ্য কোথাও নেই। বাবা মাহমুদ মুসলমান বটে, তবে শিয়া মুসলমান। স্ত্রী রামা 'হাতাকাটা' জামা পরেন। এই তিনটি কারণই যথেষ্ট হতো মামদানির মনোনয়ন না পাওয়ার জন্য। তারপরও যদি মামদানি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ঢাকা সিটির নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যেতেন, তিনটির বেশি ভোট পেতেন বলে মনে হয় না। কারণ জন্মসূত্রে পুরান ঢাকার মাহমুদ মামদানি ও দিনাজপুরের মীরা মার্ডি ঢাকার ভোটার হওয়ায় তাদের ছেলেকে একটি করে ভোট দিতে পারতেন। স্ত্রী রামার তো ভোটাধিকারই থাকত না। তাহলে তৃতীয় ভোটটি মামদানি নিজেই নিজেকে দিতেন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সিটি মেয়র নির্বাচন