You have reached your daily news limit

Please log in to continue


গান গাওয়া ও শোনা নিষিদ্ধের দাবিও উঠবে

পাঁচটি ধর্মভিত্তিক দলের উদ্যোগে ১৬ সেপ্টেম্বর আয়োজিত সেমিনার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতশিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে সেখানে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। বহু ধর্মাবলম্বী মানুষের এ রাষ্ট্রে গত ৫৫ বছরের মধ্যে ধর্মভিত্তিকসহ নানা পন্থার রাজনৈতিক দল ও সামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ে সংগীতশিক্ষক নিয়োগের বিরুদ্ধে এমন একটি মানবতাবিরোধী দাবি এর আগে আর কখনোই উত্থাপিত হয়নি। এ দেশের মানুষ কোনো দিন কল্পনাও করেনি এমন একটি পশ্চাৎপদ দাবি এ সমাজে কোনো দিন উত্থাপিত হতে পারে। বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠন হিসেবে পরিচিত তালেবানরা পর্যন্ত আফগানিস্তানে যা করেনি, বাংলাদেশে এখন সেটাই ঘটানোর চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, তালেবানরা তাদের দেশে কোনো কোনো বিশেষ সংগীত নিষিদ্ধ করলেও সংগীতচর্চা নিষিদ্ধ করেনি। সম্প্রতি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ‘তালেবান নারী ও ইরানি লেখকদের বই নিষিদ্ধ করেছে’ মর্মে যে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে, সেটি মোটেও সঠিক নয় এবং সে কারণে এটি বিভ্রান্তিকরও। তারা আসলে সরকারি নীতির পরিপন্থী ৬৭৯টি বই নিষিদ্ধ করেছে, যার মধ্যে ১৪০টি নারীদের ও ৩১০টি ইরানি লেখকদের লেখা। কিন্তু সামগ্রিকভাবে তারা মোটেও নারী বা ইরানি লেখকদের লেখা নিষিদ্ধ করেনি।

এ সূত্রে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক হবে যে উক্ত ধর্মভিত্তিক দলগুলো প্রায়ই যে পাকিস্তানের প্রতি তাদের গভীর মমতার কথা প্রকাশ করে থাকে, সেই পাকিস্তানেও কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতশিক্ষক নিয়োগের বিধান রয়েছে। তা পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মতো ধর্মীয় উগ্রবাদী দেশে যেখানে সংগীতচর্চা নিষিদ্ধ নয় এবং পাকিস্তানের বিদ্যালয়ে যেখানে সংগীতশিক্ষক নিয়োগের বিধান রয়েছে, সেখানে উল্লিখিত দলগুলো বাংলাদেশের মতো ধর্মীয় উদারনৈতিক দেশে কোন আকাঙ্ক্ষা থেকে সংগীতচর্চার বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে, তো মোটেও স্পষ্ট নয়।

বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টতই বলা আছে, ‘রাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পকলাসমূহের এমন পরিপোষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন, যাহাতে সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখিবার ও অংশগ্রহণ করিবার সুযোগ লাভ করিতে পারেন।’ বিদ্যালয়ে সংগীতশিক্ষক নিয়োগের উল্লিখিত বিধান বস্তুত সংবিধানের উপরি উক্ত নির্দেশনারই প্রতিপালন মাত্র। ফলে এ বিধান বাতিলের দাবি সরাসরি সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সংবিধানের কোনো কোনো অনুচ্ছেদ সংশোধনের দাবি উঠলেও সর্বজনীন স্বার্থসংবলিত এই ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধনের দাবি কখনোই ওঠেনি। এমনকি ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পরেও নয় এবং বস্তুত সেটি ওঠার কথাও নয়। এমতাবস্থায় সর্বজনীন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বাইরে গিয়ে এভাবে সংগীতশিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি বস্তুতই একধরনের হঠকারিতা নয়কি? বিষয়টি নির্মোহভাবে ভেবে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট দলগুলোর প্রতি অনুরোধ রাখছি। উল্লেখ্য, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বিভিন্ন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দল ও গোষ্ঠীসমূহের মধ্যে ব্যাপক মতাদর্শগত পার্থক্য থাকার কারণে প্রায় প্রত্যেকেই ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের আদর্শিক চিন্তাভাবনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক ব্যাপকভাবে সংশোধন, পুনর্বিন্যাস ও পুনর্লিখনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা কেউই রাষ্ট্র ও সমাজের মৌলিক সাংস্কৃতিক ধারায় হস্তক্ষেপ করেনি, যা সংগীতশিক্ষক নিয়োগ বন্ধের দাবির মধ্য দিয়ে এই প্রথমবারের মতো উল্লিখিত ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে করতে দেখা গেল।

তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল এবং দেশের বেতার ও অন্যান্য মাধ্যমে রবীন্দ্রসংগীতের প্রচারও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। দীর্ঘ ৬৪ বছর পর ২০২৫ সালে এসে বিদ্যালয়ে সংগীতশিক্ষক নিয়োগ বন্ধের দাবি ১৯৬১ সালের সেই ঘটনার সঙ্গে অনেকাংশে মিলে যাচ্ছে নাকি? মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ইতিমধ্যে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ তাঁর ফেসবুক পোস্টে সংগীত ও আনুষঙ্গিক সংস্কৃতিচর্চা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন। ৫১ বিশিষ্ট নাগরিকও এ বিষয়ে একটি প্রতিবাদমূলক বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু এ রকম একটি জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে এ মুহূর্তে চতুর্দিক থেকে যে ধরনের ব্যাপকভিত্তিক প্রতিবাদ, লেখালেখি ও যৌক্তিক প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত ছিল, সেটি কিন্তু একেবারেই লক্ষ করা যায়নি। এ দেশের মানুষ কি তাহলে ক্রমেই ভিতু, স্বার্থপর, আপসকামী, শিকড়বিচ্ছিন্ন ও অসংস্কৃতপনায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে? নইলে সংগীত যেখানে এ দেশের জনগণের দৈনন্দিন জীবনের অভ্যাস ও আচারের অপরিহার্য অংশ, খেতখামারে কর্মরত কৃষকের কর্মের অন্যতম অনুপ্রেরণা, নৌকার মাঝি ও গাড়িয়ালের কর্মোদ্দীপনার মূল শক্তি, শ্রমিকের ক্লান্তি লাঘবের প্রধান মন্ত্র এবং সর্বোপরি তাঁর বোধ ও অস্তিত্বের প্রতীক, সেখানে এ ধরনের একটি গণবিরোধী দাবি প্রত্যাখ্যানের আওয়াজ এত মৃদুলয়ে হয় কেমন করে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন