প্রবাসে দলীয় রাজনীতি : জাতীয় ভাবমূর্তির অবমাননা

যুগান্তর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রোকন উদ্দিন প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:২৩

বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি রাজনীতি চর্চা একটি দীর্ঘদিনের অসুস্থ প্রবণতা, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের মর্যাদা রক্ষা করতে চাইলেও প্রবাসে চলা দলীয় রাজনীতি বারবার সেই প্রচেষ্টাকে ভণ্ডুল করছে। রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিদেশের শহরে হাতাহাতি, সংঘর্ষ, কূটনৈতিক মিশনে হামলা, দূতাবাস কর্মীদের হয়রানি-এসব ঘটনা কেবল বাংলাদেশি সমাজকে বিভক্ত করছে না, বরং সংশ্লিষ্ট দেশের গণমাধ্যমে নেতিবাচকভাবে প্রচারিত হয়ে আমাদের ভাবমূর্তি চূর্ণবিচূর্ণ করছে। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকরা যখন দেশের ভেতরে গণতন্ত্র চর্চার ঘাটতি নিয়ে হতাশ, তখন প্রবাসে এ ধরনের সহিংসতা বাংলাদেশের সুনামকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।


বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মীদের কার্যক্রমের চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইতালি, গ্রিস, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে বাংলাদেশি প্রবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যানারে সংগঠিত হয়ে আসছে। তাদের মূল কাজ হওয়া উচিত দেশের উন্নয়ন, প্রবাসীদের অধিকার রক্ষা এবং বিদেশি সমাজে বাংলাদেশের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা; কিন্তু বাস্তবে তারা পরিণত হয়েছে দলীয় ক্যাডারে। বিদেশ সফরে যাওয়া মন্ত্রী, সংসদ-সদস্য কিংবা বিরোধী নেতাদের প্রবাসীরা অনেক সময় হেনস্তা করেছে; কেউ পানির বোতল ও ডিম ছুড়ে মেরেছে, কেউ হোটেলে প্রবেশ ঠেকিয়েছে, আবার কেউ কনস্যুলেট ঘেরাও করে স্লোগান দিয়েছে। এ দৃশ্য যখন সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তখন বিদেশিরা মনে করে বাংলাদেশ একটি অশান্তিপূর্ণ, বিশৃঙ্খল ও অনিরাপদ দেশ।


সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দূতাবাস ও কনস্যুলেটে হামলার হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা কনস্যুলেট ভবনের সামনে মিছিল করে ভাঙচুর চালিয়েছে, কাচ ভেঙেছে, ব্যানার টাঙিয়েছে এবং কর্মকর্তাদের গালিগালাজ করেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড একদিকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন, অন্যদিকে রাষ্ট্রের মর্যাদার অবমাননা। রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশন আসলে দেশের মুখপাত্র, যার ওপর দিয়ে বিদেশে বাংলাদেশের ইমেজ তৈরি হয়। সেই মিশন যখন নিজ দেশের নাগরিকদের আক্রমণের শিকার হয়, তখন সেই রাষ্ট্রের মর্যাদা ভয়াবহভাবে নষ্ট হয়।


এ নেতিবাচক চর্চা কেবল আকস্মিক আবেগের ফল নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক সুবিধা। বিদেশে রাজনৈতিক কমিটি গঠনের মাধ্যমে দলগুলো বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে। প্রবাসীদের কাছ থেকে চাঁদা, অনুদান, সদস্যপদ ফি-এসবই দলীয় তহবিলের বড় অংশ জোগান দেয়। একইসঙ্গে বিদেশ সফরে রাজনৈতিক নেতারা প্রবাসী সমর্থকদের কাছ থেকে যাতায়াত ও আবাসনের মতো নানা সুবিধা ও উপহারসামগ্রী পান। তাই রাজনৈতিক নেতৃত্ব সচেতনভাবে বিদেশে রাজনীতি বন্ধ করতে চান না। যদিও আগে একাধিকবার এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, বিদেশের মাটিতে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি, কারণ দলীয় নেতারা তাদের স্বার্থকে দেশের স্বার্থের ঊর্ধ্বে রেখেছেন।


এখন প্রশ্ন আসে-এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব কোথায়? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উভয়ই এ বিষয়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। দূতাবাস ও কনস্যুলেটে হামলা নতুন নয়। বারবার এসব ঘটনা ঘটলেও কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনেক সময় দেখা যায়, দূতাবাসের কর্মকর্তারা রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতিত্ব করছেন। তারা পূর্ববর্তী সরকারের অনুগত থেকে দায়িত্বে অবহেলা করছেন কিংবা প্রবাসীদের হয়রানি করছেন। ফলে প্রবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ বা অপসারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো উদাসীন থেকেছে। এতে স্পষ্ট, প্রশাসনিক শিথিলতা ও রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করছে।


অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও দায় এড়াতে পারে না। প্রবাসে অবস্থানরত রাজনৈতিক কর্মীরা যখন সহিংসতা চালায় বা দূতাবাসে আক্রমণ করে, তখন দেশে তাদের রাজনৈতিক দল বা পরিবারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এ ধরনের কর্মীরা দেশে ফিরে আরও বড় দায়িত্ব পেয়েছে। এতে এক ধরনের উৎসাহ সৃষ্টি হয়, বিদেশে দলীয় সহিংসতা চালানো অপরাধ নয়, বরং দলের প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ হিসাবে গণ্য হয়। এ দৃষ্টান্ত ভেঙে দিতে হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও