সাম্প্রতিক সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী হলো বিশ্ব। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং—এই তিন শক্তিধর নেতাকে একই মঞ্চে বন্ধুত্বপূর্ণ আলাপচারিতায় দেখা গেল। যা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে প্রতীকী মুহূর্তের গুরুত্ব অপরিসীম। তাইতো মাত্র কয়েক মিনিটের সেই দৃশ্য বিশ্ব রাজনীতিকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। প্রশ্ন উঠেছে—চীনের নেতৃত্বে কি এক নতুন অক্ষ তৈরি হচ্ছে? যদি হয়, তবে তা কতটা স্থায়ী হবে এবং বিশ্বের শক্তি-বিন্যাসে এর প্রভাব কতদূর বিস্তৃত হবে?
এসসিও এবং বহু মেরু বিশ্বের পুনরুজ্জীবন
‘সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন’ (এসসিও) দীর্ঘদিন ধরেই আঞ্চলিক সহযোগিতা ও নিরাপত্তার জন্য একটি বড় প্ল্যাটফর্ম। তবে এবারের সম্মেলনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ভারত-চীন-রাশিয়ার সম্ভাব্য অক্ষ। এক মেরু বিশ্বব্যবস্থার ধীরে ধীরে ক্ষয়িষ্ণু অবস্থান, এই নতুন সম্ভাবনা বহু মেরু বিশ্বের উত্থানকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। শি জিনপিংয়ের কূটনৈতিক বার্তা ছিল স্পষ্ট—চীন আর কেবল আঞ্চলিক শক্তি নয়, বরং বিশ্ব নেতৃত্বের দাবিদার। তার বক্তব্যে “জঙ্গলরাজে ফিরে যাওয়া” নিয়ে যে সতর্কবার্তা শোনা গেল, তা মূলত আমেরিকার প্রতি পরোক্ষ বার্তা হিসেবেই ধরা হচ্ছে।
ট্রাম্পের নীতি ও অক্ষ গঠনের প্রেক্ষাপট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। ভারতের উপর অতিরিক্ত শুল্ক চাপিয়ে তিনি যে সংকট তৈরি করেছেন, তা শুধু দিল্লির নয়, গোটা এশিয়ার অর্থনীতিকেই প্রভাবিত করছে। ভারতীয় রপ্তানি বাজারে এই শুল্কের প্রভাব পড়েছে সরাসরি। এর প্রভাবে তাদের লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়ছে। এ অবস্থায় মোদির সামনে কূটনৈতিক বিকল্প খোঁজা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। পুতিন ও শির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা মূলত ট্রাম্পের চাপেরই প্রতিক্রিয়া।
মোদি, পুতিন ও শি: ত্রয়ীর কূটনৈতিক দোলাচল
কূটনীতিতে শরীরী ভাষার তাৎপর্য অপরিসীম। তাই যখন ক্যামেরায় ধরা পড়ল তিন নেতার হাসি-ঠাট্টার দৃশ্য, তখনই বিশ্বব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠল। কিন্তু এই সাময়িক বন্ধুত্ব কতটা টেকসই? ভারত ও চীনের সীমান্তবিরোধ, গালওয়ানের রক্তাক্ত ইতিহাস, অরুণাচল-আসামের নদী-সংকট—এসব ইস্যু এখনো অমীমাংসিত। অন্যদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি সামরিক সম্পর্ক থাকলেও, ইউক্রেন যুদ্ধের পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে মস্কো আরও বেশি চীনের দিকে ঝুঁকেছে। ফলে এই ত্রয়ীর সম্পর্ককে অনেকেই “অস্বস্তিকর বাস্তবতা” বলেই অভিহিত করছেন।