
বজ্রপাত প্রতিরোধে তালগাছের ভূমিকা ও বৈজ্ঞানিক যুক্তি
বজ্রপাত হলো প্রাকৃতিক বৈদ্যুতিক বিস্ফোরণ যা মূলত বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বে ও নিম্ন স্তরের তাপমাত্রার তারতম্য এবং আর্দ্রতার কারণে সৃষ্ট হয়। বজ্রপাতের সময় মেঘের ভেতরে ঘর্ষণের ফলে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জের সৃষ্টি হয়। এই চার্জ যখন মেঘের মধ্যেই বা মেঘ থেকে ভূমির দিকে প্রবাহিত হয়, তখন সেটাই বজ্রপাত হিসেবে দেখা যায়।
বাংলাদেশে গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকালে বজ্রপাত সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে, বিশেষত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। এ সময় আকাশে সাদা-কালো কিউমুলো-নিম্বাস (Cumulonimbus Cloud) মেঘের সৃষ্টি হয়, যা বজ্রপাতের জন্য দায়ী।
উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু দ্রুত উপরে উঠলে মেঘের মধ্যে ঘর্ষণ হয় এবং উচ্চ পরিমাণে চার্জ জমা হয়। এই চার্জই পরবর্তীতে বজ্রপাত ঘটায়। বজ্রপাত (Lightning) হলো আকাশে তৈরি হওয়া একটি প্রাকৃতিক বৈদ্যুতিক স্রোত যা মেঘ ও মাটির মধ্যে বা মেঘ ও মেঘের মধ্যে হঠাৎ প্রবাহিত হয়। এর সাথে তীব্র আলোর ঝলক ও গর্জন হয়।
তালগাছ ও বজ্রপাত, বৈজ্ঞানিক যুক্তি: তালগাছ বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, এমন ধারণা অনেক পুরোনো ও প্রচলিত। তবে এর পেছনে কিছু বৈজ্ঞানিক যুক্তি আছে, যদিও তা সীমিত পরিসরে। নিচে সেই বৈজ্ঞানিক যুক্তি ব্যাখ্যা করা হলো।
উচ্চতা ও সরল গঠন: তালগাছ সাধারণত লম্বা ও সোজা গঠনবিশিষ্ট হয় এবং আশেপাশের অন্য গাছ বা কাঠামোর চেয়ে অনেক উঁচু হয়। বজ্রপাত সাধারণত সবচেয়ে উঁচু, বিদ্যুৎ পরিবাহী বস্তুতে আঘাত করে, তাই তালগাছ প্রাকৃতিকভাবে বজ্রপাতের আকর্ষণ বিন্দু হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তালগাছ নিজে বজ্রপাত সহ্য করে এবং আশপাশের মানুষ বা গাছপালা কিছুটা সুরক্ষিত থাকতে পারে।
আর্দ্রকাণ্ড ও জলীয় উপাদান: তালগাছের কাণ্ডের ভেতরে পানি ও আর্দ্রতা বেশি থাকে। বজ্রপাতের সময় উচ্চ তাপমাত্রায় এই পানি কিছুটা সহায়ক হয় তাপ ও বিদ্যুতের প্রবাহকে কম প্রতিরোধ করে পার করতে। এতে তালগাছ নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, বিদ্যুতের প্রবাহ দ্রুত মাটিতে চলে যেতে পারে।
প্রাকৃতিক ‘আর্থিং’ ব্যবস্থা: তালগাছ মাটি পর্যন্ত গেঁথে থাকে এবং এর শিকড় গভীরে যায়। বজ্রপাত তালগাছে আঘাত করলে সেই বিদ্যুৎ মাটির গভীরে চলে যেতে পারে, এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক ‘আর্থিং’ প্রক্রিয়ার মতো কাজ করে।
তালগাছ বজ্র নিরোধক (lightning rod) নয়। এটি কখনোই বিজ্ঞানভিত্তিক বজ্র প্রতিরোধক বিকল্প হিসেবে বিবেচিত নয়। বরং বজ্রপাতের সময় তালগাছের নিচে থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
তালগাছ বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণ করে না, তবে এর উচ্চতা ও গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে বজ্রপাতের প্রথম আঘাত তালগাছে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। ফলে আশপাশের এলাকা কিছুটা সুরক্ষিত থাকতে পারে। এটি প্রাকৃতিক বজ্র নির্গমন পথ হিসেবে কাজ করে, তবে তা সম্পূর্ণ সুরক্ষা দেয় না।
বজ্রপাতের বৈজ্ঞানিক কারণ:
মেঘে চার্জ সঞ্চিত হওয়া (Charge Separation): বজ্রপাত সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস (Cumulonimbus) নামক উঁচু, ঘন ও বৃষ্টিভারে ভারী মেঘে ঘটে। এই মেঘের ভেতরে বরফ কণা, জলকণা ও তুষার কণার ঘর্ষণের ফলে মেঘের ওপরে ধনাত্মক চার্জ এবং নিচে ঋণাত্মক চার্জ জমা হয়।
বিদ্যুৎ বিভবের পার্থক্য (Potential Difference): মেঘের নিচের ঋণাত্মক অংশ এবং ভূমির ধনাত্মক অংশের মধ্যে একটি শক্তিশালী বিদ্যুৎ বিভব (ভোল্টেজ পার্থক্য) তৈরি হয়। এটি কয়েক কোটি ভোল্ট পর্যন্ত হতে পারে।