নারীর ডাকে মৈত্রীযাত্রা– তাদের রাষ্ট্র, আমাদের প্রতিরোধ

বিডি নিউজ ২৪ ডালিয়া চাকমা প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২৫, ১২:২৫

জেন্ডার নিয়ে কাজ করার সুবাদে মাঝেমধ্যে স্কুলের কোনো কোনো প্রোগ্রামে ক্লাস নেয়ার সুযোগ হয়। কারণ সব সময় বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ কিছু শব্দে আমরা আমাদের চারপাশটা পুরোপুরি বুঝতে পারি না। অক্ষর তো সবসময়ই স্থির, কিন্তু জীবন ভারী অস্থির।


এরকম একবার একটি হাই স্কুলে একটা ক্লাসে নারী বলতে আমরা কী বুঝি, একজনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। ও বলেছিল, ‘শাড়ি পরে, ঘরের কাজ করে।’


‘আর?’ জানতে চাই।


‘আর আমাদেরকে পড়ায়, স্কুলে নিয়ে আসে, আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করে, অসুখ হলে যত্ন নেয়।’


‘অন্য সময় নেয় না?’ জিজ্ঞাসা করতেই সবার হাসি।


সে বলল, ‘সবসময়ই করে। কিন্তু অসুস্থ হলে বেশি করে, অন্য সময় বকা দেয়, শাসন করে। কিন্তু অসুখ হলে তখন কম শাসন করে।’


এই ধরণের উত্তরগুলো আমার আলাপ শুরু করতে সহজ করে। একজন ব্যক্তির যে নানান রকম পরিচয় থাকে, আবার সেই পরিচয়গুলো যে নানান পরিসরে পরিবর্তিত হয়, সেই সঙ্গে ভিন্ন মাত্রিক অভিজ্ঞতা ও পরিস্থিতি তৈরি হয়– এই আপাত জটিল বিষয়গুলো অনুধাবণের মধ্য দিয়ে তা বুঝানো যায়।


যেমন, এরপর ওকে বলি, ‘তোমার মা তো তোমাকে শাসন করে, তোমার মাকে কেউ শাসন করে না?’


বলল, ‘বাবা, দাদা-দাদি, নানুরা মাকে শাসন করে, আবার মামাও করে।’


এরপর সবাইকেই জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আমাদের পরিবারে আশপাশে কে কাকে শাসন করে, আমরা কি সেটা খেয়াল করেছি?’


এরপর কাগজ কলম নিয়ে আলাপ করে পরিবার, সমাজে বিদ্যমান নানান ক্ষমতা সম্পর্কের নানান ডাইমেনশন নিয়ে আলাপ করি আমরা। পরে দেখা গেল, এই পদ্ধতিতে ওরা আরো বৃহৎ পরিসরে যে ক্ষমতা কাঠামো, সেটাকেও নির্ণয় করার চেষ্টা করেছে। এরপর দেখা গেল তারা নিজেরাই পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রে বিদ্যমান ক্ষমতা সম্পর্কের বহুস্তরীয়তা নির্ণয় করে ফেলছে।


এই যে সামান্য একটা চিন্তাসূত্র বাচ্চাগুলোকে দেয়া হলো, তারা বুঝল নারীর কোনো একক সংজ্ঞা নেই কিংবা পরিচয়েরও কোনো একক সংজ্ঞা নেই। নারী হওয়ার অর্থ শুধুমাত্র শরীর বা আচরণ দিয়ে নির্ধারণ করা যায় না, বরং তা নির্ধারিত হয় শ্রেণি, জাতিপরিচয়, সমাজ, দেশ, কাল, সংস্কৃতির নানানমাত্রিক প্রেক্ষাপটের মাধ্যমে। তাই এক নারী সীমিত কিছু অধিকার পেলেও তা সকল নারীর অধিকার নিশ্চিত করে না।


আমার কাছে বড়দের সঙ্গে আলাপ করার চেয়ে বরং ছোটদের সঙ্গে আলাপ করাটা অনেক আনন্দের অনুভূতি দেয়। মনে হয়, তারা সহজে বুঝতে পারে। বড়দের মতন অত ষড়যন্ত্রতত্ত্ব করে সহজ বিষয়গুলো জটিল করে না।


‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ নামক সাম্প্রতিক সামাজিক-রাজনৈতিক আয়োজনটি ঘিরে যে ধরণের অনুমানভিত্তিক নানান রকম সমীকরণ ও উদ্দেশ্যমূলক বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, এতে আবারও ওই অস্বস্তিটা কাজ করছে। মনে হচ্ছে, খুব সহজ বিষয়টাকে খামোকা জটিল করা হচ্ছে। মানুষের যে বহুমাত্রিক পরিচয়, বহুমাত্রিক নিপীড়নের অভিজ্ঞতা এবং তার বিরূদ্ধে বহুমাত্রিক লড়াই বিদ্যমান– তা যে একটা সরকার পরিবর্তন কিংবা একটা জুলাই অভ্যুত্থান দিয়ে সমাধান হয় না, সেটা বুঝতে পারার জন্য খুব জটিল সমীকরণে যেতে হয় না। এই সমালোচনা কিংবা বুঝতে না চাওয়া, নারীর সংগ্রামের বহুমাত্রিকতার বিরুদ্ধেই এক ধরণের আপত্তি।


এই মৈত্রীযাত্রাকে কেউ বলছেন বর্তমান সরকারের এজেন্ডা, কেউ বলছেন বিগত আওয়ামী আমলের লোকদের ছায়া প্রকল্প, কেউ বলছেন গ্রামীণ নারীর বাস্তবতা বিবর্জিত শহুরে নারীদের শো ডাউন, এনজিওর প্রকল্প, কেউ আবার বলছেন পশ্চিমা নারীবাদের প্রক্সি। অথচ এই আয়োজনই ছিলো নারীর অধিকারের ইন্টারসেকশনাল বাস্তবতার এক প্রকাশ, যেখানে নারী কেবল একটি শ্রেণির, একটি জাতিসত্তার, কিংবা একটি ভূগোলের প্রতিনিধি ছিল না।


যারা এ ধরণের আলাপ করছেন, তাদের অনেককেই দেখা গেছে জুলাই অভ্যুত্থানে জনগণের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তৈরি হওয়া একাত্মতায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন, নানানভাবে সমর্থন জুগিয়েছেন। তাহলে নারীদের এই মৈত্রীযাত্রাকে কেন নানানভাবে বিশ্লেষণ, ক্ষেত্রবিশেষে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও