বাংলাদেশকে হজম করে ফেলতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

www.ajkerpatrika.com অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১০:৪৪

আনু মুহাম্মদ বাংলাদেশের একজন অন্যতম গণবুদ্ধিজীবী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম সংগঠক, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সাবেক সদস্যসচিব। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের অন্যতম নেতা এবং ‘সর্বজন কথা’ পত্রিকার সম্পাদক। মার্কিন শুল্ক ও সরকারের সঙ্গে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট বা গোপনীয়তা রক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে।


যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে নির্ধারণ করেছে—এটাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?


আনু মুহাম্মদ: যুক্তরাষ্ট্র তো ট্রাম্পের নেতৃত্বে সারা বিশ্বে একটা উন্মাদনা শুরু করেছে। শুল্ক বৃদ্ধির একচেটিয়া সিদ্ধান্ত যেসব যুক্তিতে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থনীতির সাধারণ সূত্র অনুযায়ী, এসবের কোনো যুক্তি নেই। ট্রাম্পের যুক্তি হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি আছে এবং তাঁর দেশ থেকে আমাদের দেশে অনেক পণ্য আনা হয় না। এই যে আনা হয় না বা তাঁর দেশ থেকে পাঠানো হয় না, এসব তো অর্থনৈতিক কারণে হয়।


আমাদের বিশ্ববাজারে যে জায়গা থেকে আমদানি করা সুবিধাজনক, আমরা তো সেখান থেকেই আমদানি করব। অর্থনৈতিক যুক্তিতে তা-ই হওয়ার কথা। বাজার অর্থনীতির কথা হলো, যেখানে দাম কম পাওয়া যায়, সেখান থেকে আমদানি করা। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করার আসলে আমাদের তেমন কিছু নেই। সে কারণে সেখানে ঘাটতি থাকে। আবার যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা আছে আমাদের পোশাকের। সে কারণে সেখানে আমাদের পোশাক যায়। বাজার অর্থনীতির মধ্যে তো জোরজবরদস্তির ব্যাপার থাকার কথা না।


যুক্তরাষ্ট্র বাজার অর্থনীতির কথা বলে। তারাই আবার বাজার অর্থনীতির নিয়মকানুন, বিধি-ব্যবস্থার সবকিছুকে ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়ে এখানে পুরো একটা দানবীয় সংঘাতসুলভ ব্যবহার করে নানা দেশে ইচ্ছেমতো শুল্ক আরোপ করছে। এটা আসলে অর্থনীতির শক্তির জোরে করছে না, সেটা করছে সামরিক শক্তির জোরে। যুক্তরাষ্ট্রের আসলে এখন আর অর্থনীতির কোনো শক্তি নেই।

এটা তারা করতে পারছে অন্যান্য দেশের অনৈক্যের কারণে। তারা এ কারণে সম্রাটসুলভ ঔদ্ধত্য দেখাতে পারছে। ট্রাম্পের মতলবটা ছিল বিভিন্ন দেশের ওপর ৩০ থেকে ৮০ বা তার বেশি শুল্ক আরোপ করা। কমানোর উদ্দেশ্য মাথায় রেখে তিনি এ রকম বড় অঙ্কের শুল্ক বসিয়েছেন। তারপর বিভিন্ন ধরনের শর্ত চাপিয়ে এখন আবার দর-কষাকষি করছেন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে। বিভিন্ন ধরনের নীতিগত পরিবর্তনের নির্দেশ দিচ্ছেন।


বাংলাদেশে যেটা ২০ শতাংশ দাঁড়াল, সেটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। আগে আমাদের শুল্কের পরিমাণ ছিল ১৬ শতাংশ; তখন ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, ভারত, সৌদি আরবের চেয়ে আমাদের শুল্কহার বেশি ছিল। তার ওপর এখন ২০ শতাংশ বসল। সে হিসাবে ওই সব দেশের কাছাকাছি আছে। এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


ট্রাম্পের এ ধরনের অপতৎপরতায় শুধু বিশ্বের নানা দেশ না, স্বয়ং যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেখানকার ভোক্তাদের বেশি দামে জিনিস কিনতে হবে। এতে করে সব দেশ থেকে যত ধরনের জিনিস যাবে, সবকিছুর দাম বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে একটা সংকট তৈরি হবে। ফলে সেখানে বেকারত্ব বাড়বে।


ট্রাম্প যত ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাঁর নাগরিকদের, তার কিছুই পূরণ করতে পারছেন না। তাই ট্রাম্প শুধু বিশ্বের মানুষের জন্য না, নিজ দেশের মানুষের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।


তাঁর এসব উদ্যোগের কারণে কিছু কোম্পানির লাভ হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকের প্রত্যেকেরই প্রকৃত আয় কমে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতি এমনিতেই সংকটের মধ্যে আছে, আরও সংকটের মধ্যে পড়বে। আর সেখানে যদি মন্দা হয়, তার প্রভাব সারা বিশ্বে দেখা দেবে শুধু ট্রাম্পের কারণে।


যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি কোনো বৈশ্বিক নিয়ম বা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং রাজনৈতিক ও কৌশলগত অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তৈরি। বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত ও দুর্বল অর্থনীতির ওপর এ ধরনের বৈষম্যমূলক শুল্ক আরোপ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ন্যায্য ও সমান সুযোগভিত্তিক’ বাণিজ্যনীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন নয় কি?


আনু মুহাম্মদ: এটা আগে থেকেই হচ্ছিল। আন্তর্জাতিক অনেক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের আইন অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে গেছে। আগে থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইসরায়েল যে ফিলিস্তিনে প্রতিদিন মানুষ (শিশু ও নারী) হত্যা করছে, এর বিরুদ্ধে জাতিসংঘ, নিরাপত্তা পরিষদ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোটাই কার্যকর হয়নি। আন্তর্জাতিক বিধিব্যবস্থা, আইনকানুন—কোনো কিছুই কাজ করছে না।


বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে ব্যাপক উৎসাহ দেখিয়েছে। এটা বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের মতো না। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সদস্য হতে হয় চাঁদার ওপর নির্ভর করে। একটি দেশের চাঁদার পরিমাণ বেশি হলে তার ভোটের সংখ্যা বেশি হয়। চাঁদার পরিমাণ কম হলে ভোটও কম হয়।


কিন্তু বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা হলো জাতিসংঘের একটি দেশের জন্য একটি ভোট। সে কারণে অন্য দেশের জন্যও একধরনের সুবিধা আছে। ফলে এই সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছে। তার ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলা করতে ‘ব্রিকসের’ মতো সংস্থার জন্ম হয়েছে। ফলে বড় দেশের সঙ্গে ছোট দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সমঝোতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে ব্রিকসের জন্ম যুক্তরাষ্ট্র পছন্দ করে না। এরপর একটা পর্যায়ে দেখা গেল, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা সেভাবে আর কার্যকর নেই।


ট্রাম্পের এই শুল্ক চাপানোটা আন্তর্জাতিক বাজার অর্থনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে। এভাবে একটা দেশ শুল্ক আরোপ করতে পারে না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাধারণ নিয়ম হলো, কোনো দেশ শুল্ক আরোপ করলে সেখানে অন্য দেশ যেতে পারে, আবার না-ও যেতে পারে। সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য এখন ট্রাম্প জোরজবরদস্তির আশ্রয় নিচ্ছেন। এখানে তিনি সামরিক শক্তি দেখাচ্ছেন। সমস্ত কিছু যুক্তরাষ্ট্র ঠিক করে দেবে। মানে, বাংলাদেশকে হজম করে ফেলতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। শুধু বাংলাদেশ কেন, সারা বিশ্বের ক্ষেত্রে তারা সেই চেষ্টাই করছে।


একটা অনির্বাচিত সরকার কি এ ধরনের ঝুঁকি নিতে পারে?


আনু মুহাম্মদ: অন্তর্বর্তী সরকার একটা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তাদের দায়িত্ব আরও বেশি ছিল এগুলো প্রতিরোধ করার জন্য। তারা তো কোনো স্থায়ী সরকার না। নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত এ ধরনের চুক্তিতে না যাওয়াই তাদের উচিত ছিল। কিন্তু দেখা গেল, তারা আগ্রহী হয়ে এ ধরনের শর্ত মেনে নিয়ে চুক্তিটা করল। যাঁরা চুক্তিটা করেছেন, তাঁদের তো একসময় খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার প্রবাসী, তাঁরা বাংলাদেশে থাকবেন না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির শিকার হতে হবে। সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো, রাজনৈতিক, সামরিক ও ভূ-রাজনৈতিক পোলারাইজেশন সামনে তৈরি হবে; সেগুলোর একটা ভিকটিম হতে পারে বাংলাদেশ এ চুক্তির কারণে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও