সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর: বিরোধিতা অযৌক্তিক

www.ajkerpatrika.com ড. মোর্ত্তুজা আহমেদ প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১০:২২

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা বর্তমানে এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির যুগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আধুনিকায়ন করা সময়ের দাবি। এই প্রেক্ষাপটে সাত কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের প্রস্তাব একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারত। কিন্তু প্রস্তাব ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কিছু মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাদের দাবি—এতে আসনসংখ্যা কমে যাবে, ব্যয় বাড়বে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশ্ন হলো, এই আশঙ্কা কতটা যুক্তিসংগত? তথ্য, ইতিহাস ও বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা বলছে—এই রূপান্তরের বিরোধিতা মূলত অনুমাননির্ভর, তথ্যনির্ভর নয়। বরং এটি দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার এক বিরল সুযোগ।


বর্তমানে সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। অর্থাৎ, তাদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ঢাকার মূল ক্যাম্পাস থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। এর ফলে স্বাধীনভাবে পাঠ্যক্রম উন্নয়ন সম্ভব হয় না। গবেষণা কার্যক্রম সীমিত থেকে যায়। আন্তর্জাতিক তহবিল বা প্রকল্প গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হয়। একবিংশ শতাব্দীতে যখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু শিক্ষাদানের কেন্দ্র নয় বরং গবেষণা ও উদ্ভাবনের মূল চালিকাশক্তি, তখন এই সীমাবদ্ধতা দেশের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। ইউনেসকোর ২০২৩ সালের প্রতিবেদন বলছে, স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা ও উদ্ভাবনের হার ৪০ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ, সাত কলেজ যদি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়, তাহলে গবেষণা ও জ্ঞান সৃষ্টির হার বহুগুণ বাড়বে। ভারতের কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান উন্নত করেছে এবং আন্তর্জাতিক ছাত্র বিনিময় কর্মসূচি চালু করেছে। এই উদাহরণগুলো প্রমাণ করে, স্বায়ত্তশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা মানে শুধু নামের পরিবর্তন নয়; এটি গুণগত পরিবর্তনের অনুঘটক।

বিরোধীরা আশঙ্কা করছেন, পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হলে ভর্তি প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং আসনসংখ্যা কমে যাবে। কিন্তু ইতিহাস ও তথ্য বলছে উল্টো। বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পর নতুন বিভাগ, নতুন অনুষদ, নতুন ক্যাম্পাস যুক্ত হয়—যা ভর্তির ক্ষমতা বাড়ায়, কমায় না। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০০১ সালে মাত্র ১ হাজার শিক্ষার্থী দিয়ে শুরু করলেও এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮ হাজারের বেশি (ইউজিসি রিপোর্ট, ২০২৪)। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৬ সালে মাত্র তিনটি বিভাগ দিয়ে যাত্রা করে, বর্তমানে ২০টির বেশি বিভাগ রয়েছে এবং আসনসংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে। অতএব, সাত কলেজের পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আসনসংখ্যা কমানোর পরিবর্তে নতুন আসন সৃষ্টি করবে, যা উচ্চশিক্ষাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করবে।

শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগ প্রয়োজন। পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হলে ব্যয় কিছুটা বাড়তে পারে, কিন্তু সেই ব্যয় বহুগুণে দেশের অর্থনীতিতে ফিরে আসে। বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের এক সমীক্ষা বলছে, উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগকৃত প্রতি ১ টাকা দেশের অর্থনীতিতে ৫-৭ টাকার সমমূল্যের অবদান দেয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় ব্যয় বৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি বৃত্তি এবং গবেষণা অনুদানের মাধ্যমে দরিদ্র শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনা করছে। মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি পুত্র মালয়েশিয়া প্রাথমিকভাবে ব্যয় বাড়ালেও পর্যাপ্ত বৃত্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চাপ কমিয়ে এনেছে। এ থেকে প্রমাণিত হয়, ব্যয় বৃদ্ধি কোনো অন্তরায় নয়, বরং উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সঠিক নীতি থাকলে এই ব্যয় শিক্ষার্থীদের জন্য বাধা নয়, সুযোগে রূপান্তরিত হয়। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা শুধু একাডেমিক উন্নয়ন নয়; এটি স্থানীয় অর্থনীতিকে গতিশীল করে, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। স্থানীয় বাণিজ্য সমিতির তথ্যমতে (২০২৩), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর আশপাশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। সাত কলেজ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হলে এলাকায় নতুন চাকরি, উদ্যোক্তা কার্যক্রম এবং সেবা খাতের সম্প্রসারণ ঘটবে।


বিরোধীদের প্রধান যুক্তি হলো, জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পর ব্যয় বেড়েছে এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটি ছিল নীতি প্রণয়নের ঘাটতি, রূপান্তরের নয়। ভিয়েতনামের হুয়ে কলেজ অব এডুকেশনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সময় সামাজিক অন্তর্ভুক্তি ও বৃত্তি নীতি প্রণয়ন করা হয়। ফলে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা বাদ পড়েনি বরং শিক্ষার মান বেড়েছে। যদি সাত কলেজের ক্ষেত্রে সঠিক নীতি গ্রহণ করা হয় যেমন—বৃত্তি, আসন সম্প্রসারণ, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ সুবিধা—তাহলে জগন্নাথের সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও