প্রয়োজন ব্যবসাবান্ধব নীতি

যুগান্তর আবু আহমেদ প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৩২

বিভিন্ন কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। অনেক শিল্প-কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততা, শ্রমিক অসন্তোষ, ব্যাংকব্যবস্থায় সুদের হার বৃদ্ধি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি নানা কারণে শিল্প-কলকারখানাগুলোয় একটা অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ফলে পণ্য রপ্তানিতেও এর একটা প্রভাব পড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নিশ্চিতভাবেই দেশের অর্থনীতিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিষয়টি নিয়ে আশু কোনো সমাধানে না এলে দেশের অর্থনীতিতে ধস নামার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। গত ১-২ বছর আগে ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সুদের হার বৃদ্ধি কিংবা টাকার অবমূল্যায়ন এবং ডলারের দাম বৃদ্ধি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ট্রানজেকশনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। একবাক্যে বলা যায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে ঋণাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এটি কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই।


গত বছরের ৫ আগস্টের আগের ১৫ বছর বলতে গেলে নির্বাচনবিহীন ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ দুঃশাসন চালিয়েছে। তাদের আনুকূল্য ছাড়া অর্থাৎ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে কানেকশন ছাড়া অথবা উপঢৌকন দেওয়া ছাড়া কেউ বড় ব্যবসা করতে পারেনি। অনেক বড় শিল্প গ্রুপের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যে যাই করুক না কেন, আওয়ামী শাসন কোর্টে ‘তেল’ দিতে হয়েছে, যার ফলে ফ্যাসিস্ট শাসকের পৃষ্ঠপোষকধারী ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা নির্বিঘ্নে ইচ্ছামতো ব্যাংক ঋণ পেয়েছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তো পেয়েছেই। দুর্ভাগ্যক্রমে ব্যাংকের ঋণ যতটা দরকার, তার থেকে বেশি ঋণ বিভিন্ন কায়দায় নিয়ে গেছে সরকারের আনুকূল্যধারী বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলো; যার ফলে বেশির ভাগ ব্যাংক প্রায় খালি হয়ে গেছে। ব্যাংকব্যবস্থা এখন প্রায় খাদের কিনারে চলে গেছে। এসবের সঙ্গে মূলত যারা জড়িত ছিল, তারা অনেকেই পালিয়ে গেছে। ফলে তাদের রেখে যাওয়া শিল্প ও কলকারখানাগুলোয় একটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


সুতরাং, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফেরাতে হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাহায্য করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসতে হবে। অচল বা স্থবির ব্যবসা-বাণিজ্যকে বন্ধ করে দেওয়া বা ব্যবসা স্লোডাউন করে দেওয়া কোনো উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়। কেউ যদি আবারও এলসি খুলতে চায়, তাদের এলসি খুলতে দেওয়া হোক। বরং এখন এলসি খোলার জন্য বোধহয় নগদ টাকাই দিতে হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। সুতরাং, এর জন্য সরকার থেকে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া ঠিক হবে না। অবশ্য সরকার বাধা দিচ্ছে বলে মনে হয় না। দেশের ব্যবসায়ী মহল, যারা সৎভাবে ব্যবসা করতে চান, তাদের অবশ্যই সুযোগ দিতে হবে। মুখ থুবড়ে পড়া ব্যবসায়ীদের ঋণের কিস্তির ব্যাপারে সহযোগিতা করা যেতে পারে। কাদের কাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সুবিধা দেওয়া যেতে পারে, এটি বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যালোচনা করে দেখতে পারে। দরকার হলে তাদের সময় বৃদ্ধি করে দিতে পারে; বলতে পারে, ঠিক আছে, আপনাদের প্রভিশন থেকে মুক্তি দিলাম। সময় বৃদ্ধি করে কিছু সুবিধা দেওয়া হলে ব্যবসাগুলো হয়তো দাঁড়িয়ে যাবে। খাদের কিনারে থাকা ব্যাংকগুলোকেও এ ধরনের সুবিধা দিয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে পারলে ব্যাংকগুলোও উঠে দাঁড়াতে পারবে।


সবকিছু মিলিয়ে আর্থিক খাতের আজ যে দুরবস্থা, তার জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দায়ী হচ্ছে ওই কথিত শিল্পগ্রুপগুলো। রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কারণেই আজকের এ দুরবস্থা। শুধু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোকে প্রায় অচল করে দিয়েছে তারা। বেসিক ব্যাংকের উদাহরণ তো আমাদের চোখের সামনে আছেই। ভালো একটা ব্যাংক, এখন সেটি সবচেয়ে নিুস্তরে চলে গেছে। ইসলামী ব্যাংকের উদাহরণও আমাদের চোখের সামনে আছে। যাই হোক, এ বিষয়গুলো সবাই জানে। আমি শুধু এ কথাই বলব, ব্যবসা বন্ধ করার দরকার নেই। ব্যবসাকে চলতে দিন এবং এজন্য যতটা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দরকার, সেটা দেওয়া উচিত।


সরকার এ ব্যাপারে নীতিসহায়তা দিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে যে নীতি সহায়তা দিলে ভালো হবে, সেটা দিতে পারে। তবে এ নীতি সহায়তা কী আকারে দেবে, সেটি সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে যারা এসব ব্যবসার পেছনে দুর্নীতি করেছে, বিদেশে অর্থ পাচার করেছে, তাদের আলাদাভাবে জবাবদিহি করতে হবে এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে। তবে ব্যবসার যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেটি মাথায় রাখতে হবে। নির্দেশনা দিয়ে হোক বা ঋণের কিস্তি পুনর্গঠন করে বা পুনঃতফশিল করে হোক, ব্যবসাগুলোকে দাঁড়াতে দিতে হবে। তা না হলে দেশে বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে ধস নামবে। ফলে অর্থনীতিতে এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।


এখন তো আর আগের মতো খুশিমতো ঋণ নেওয়া এবং অর্থ পাচার করা সম্ভব হচ্ছে না এবং ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও হবে না। এখন ব্যবসা করতে হলে সঠিকভাবেই করতে হবে। ওই ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর বোঝা উচিত, এখন থেকে তাদের প্রকৃত ব্যবসাতেই যেতে হবে। সুতরাং, কোনো কলকারখানা যদি বন্ধ হয়ে যায়, একটু পরীক্ষা করে দেখা দরকার সেটি কী কারণে বন্ধ হয়েছে। সেটি কি মালিক পালিয়ে যাওয়ার কারণে হয়েছে, নাকি আর্থিক চাপে-এগুলো একটু দেখা দরকার। সরকার নিরপেক্ষভাবে দেখলে এটা রোধ করা যেতে পারে। কারণ, কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে অনেক লোক বেকার হয়ে যাওয়া। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের রপ্তানিও কমে যাওয়া। অবশ্যই এটি দেশের জন্য ক্ষতি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও