ছয় মাসেই আওয়ামী লীগ এত চাপে কেন
বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিতে হঠাৎ সংযোজন-বিয়োজনের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতারা উল্লাস প্রকাশ করতে পারেন। ভাবতে পারেন, প্রতিপক্ষ যত দুর্বল হবে, তাদের শক্তি ও জনপ্রিয়তা তত বাড়বে। কিন্তু মাঠপর্যায়ের চিত্র তা মোটেই সমর্থন করে না।
পেশাগত কারণে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়। ব্যক্তিগত আলাপে অনেকে দুঃখ-বেদনার কথা বলেন। ক্ষোভের কথা জানান। সাম্প্রতিক আজীম–বেনজির-আজিজ কাণ্ডের কথা উল্লেখ করে সংসদ সদস্যদেরও কেউ কেউ খেদ প্রকাশ করে বলেন, সরকার তো আওয়ামী লীগ চালাচ্ছে না। আওয়ামী চালালে এসব কাণ্ড ঘটতে পারত না।
নির্বাচনের পর সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিত্যপণ্যের দাম কমানো। কিন্তু সেটি তারা করতে পারেনি। বিশেষ করে খাদ্য পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত পনের বছরে যদি কোনো খাতে বড় ধরনের ধস নেমে থাকে, সেটা হলো ব্যাংকিং খাত।
নানা কায়দা কৌশল করেও সরকার মন্দ ব্যাংকগুলোকে টেনে তুলতে পারছে না। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। বাজেটের ঘাটতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে দেশিয় ও বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিয়ে। ব্যবসায়ীদের শঙ্কা সরকার দেশিয় উৎস থেকে বেশি ঋণ নিলে তারা বেকায়দায় পড়বেন। ঋণ পাবেন না।
ফলে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের যেমনটি ফুরফুরে মেজাজে থাকার কথা, তার ছিটোফোটাও দেখছি না। ছয় মাসের মাথায় দলটি ঘরে–বাইরে এতটা চাপের মধ্যে পড়বে কেউ ভাবেননি। প্রথমত, আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচনে জিতে মনে করেছিল, তাদের সামনে আর কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। জাতীয় সংসদে তাদের একক আধিপত্য, প্রশাসনের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কথার বাইরে কিছু করবে না। এখন প্রতিদ্বন্দ্বীহীন আওয়ামী লীগ নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে।
নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র কঠোর মনোভাব দেখালেও নির্বাচনের পর তারাও দৃশ্যত অবস্থান বদলেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, অতীত পেছনে ফেলে তারা সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে চান। তাদের এই কথার আড়ালে আরও কোনো কথা আছে কি না, সেটাও ভাবার বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু যেদিন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার কথা বললেন, তার দুই দিন পরই সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি হলো। এটা নিশ্চয়ই সরকার তথা আওয়ামী লীগের জন্য স্বস্তিকর নয়।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জনের মুখে আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে এক অভিনব কৌশল নিল, যা বহুদলীয় গণতন্ত্রে দেখা যায় না। দল একজনকে মনোনয়ন দিয়ে অন্যদেরও বলল, ‘তোমরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পার’।