জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের আমৃত্যু সমর্থক
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আমার শিক্ষক ছিলেন। তিনি শিক্ষক হিসেবে ছিলেন দায়িত্বশীল। শিক্ষার্থীদের প্রতি ছিল তাঁর অত্যন্ত সদয় দৃষ্টি। তিনি শ্রেণিকক্ষে পাঠ্যবিষয় খুবই সুন্দর ও সহজ করে বুঝিয়ে দিতেন। অতিরিক্ত কথা বলতেন না। তাঁর যাঁরা ছাত্রছাত্রী ছিলেন প্রত্যেকেই এটা স্বীকার করবেন। ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার পরও কোনো শিক্ষার্থীর সামনে তাঁর প্রসঙ্গে কথা উঠলে প্রশংসা করেন। তাঁর গবেষণাকর্মের দিকে নজর দিলেও দেখা যাবে অত্যন্ত নিখুঁত এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন।
তিনি নিজেও মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমএ পাস করেছিলেন। পরে কিছুদিন বাংলা একাডেমিতে একটি গবেষণা কাজ করার পরে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। অল্প বয়সেই তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। লেখালেখির প্রথম দিকে তিনি কিছু কবিতা, গান, গল্প লিখলেও পরে গবেষণার পাশাপাশি প্রবন্ধ রচনাকেই বেছে নিয়েছিলেন নিজের পছন্দের ক্ষেত্র হিসেবে। সেই সময়ে প্রকাশিত গ্রন্থ ‘মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য’ তাঁকে লেখক হিসেবে তাঁর খ্যাতি ও পরিচিতি এনে দিতে সহায়ক ভূমিকে রেখেছিল। ‘মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য’ রচনার ফলে এই অঞ্চলের মুসলিমদের সাহিত্যিক হিসেবে ভূমিকা মনোযোগ আকর্ষণ করে। গবেষণা কাজের পাশাপাশি তাঁর সম্পাদিত বিভিন্ন বই নানা সময়ে আমাদের চাহিদা মিটিয়েছে। তাঁর সম্পাদিত বেশকিছু স্মারকগ্রন্থ সুনাম কুড়িয়েছে। তাঁর নিজের লেখা গ্রন্থের মধ্যে ‘মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র’, ‘স্বরূপের সন্ধানে’, ‘পুরনো বাংলা গদ্য’ বাংলা ভাষার সম্পদ হিসেবেই বিবেচিত হবে। আবার সংখ্যায় অল্প হলেও তিনি বিদেশি সাহিত্যের কিছু অনুবাদ করেছেন। অনেকেই আক্ষেপ করে বলে থাকেন, তিনি গবেষণা কাজে আরও সময় দিলে কিংবা নিয়োজিত থাকলে আমাদের দেশ গবেষণায় আরও সমৃদ্ধ হতে পারত।
আনিসুজ্জামান শিক্ষক হিসেবেও ছিলেন অনুকরণীয়। শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে তাঁর নিজস্ব বোঝাপড়া ছিল। ইউরোপীয় শিক্ষার প্রভাব আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে পড়লেও বাংলা বিভাগের ওপর খুব বেশি পড়েনি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময়ই বাংলা বিভাগের আলাদা গুরুত্ব ছিল। সেটি এখনও পরিমাণে অল্প হলেও রয়েছে। দেশের স্বাধীনতা অর্জনে অগ্রভাগে থাকা ও বর্তমানে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ প্রদর্শন করে যাচ্ছে। আমরা যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করতে চাই তাহলে এর জন্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা বৃদ্ধি করতে হবে। এই ধারণাটি আনিসুজ্জামান বেশ জোরালোভাবেই সামনে এনেছিলেন।