সতর্ক দৃষ্টি থাকুক অস্থির বাজারে
এবার রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার আরও বেশি অস্থিতিশীল হবে– এটা ধরেই নেওয়া হয়েছিল। বাজারকে স্থিতিশীল রাখার তৎপরতা অবশ্য কম ছিল না। শুধু সরকারি সংস্থা নয়; ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইও তৎপর হয়ে উঠেছিল। এমন প্রত্যাশাও ব্যক্ত করা হয়– মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের মতো এখানকার ব্যবসায়ীরাও কেন রমজানে দামে ছাড় দিয়ে ব্যবসা করবেন না? এসবে কাজ কতটা হয়েছে, তা ভোক্তাসাধারণ ভালোই টের পাচ্ছেন এখন। ব্যবসায়ীরা আগের মতোই আচরণ করছেন এবং তাঁদের কাজকর্ম আরও ভালোভাবে মনিটরিংয়ের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে।
বাজার মনিটরিংয়ে আইন বা বিধিবদ্ধ সংস্থার যে তেমন ঘাটতি নেই– সে খবর সম্প্রতি ছাপা হয়েছে সমকালে। মিডিয়ায় নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে প্রতিবেদনেরও শেষ নেই। এগুলোর ধরনে অবশ্য ভিন্নতা আছে। কিছু বর্ণনা ও অভিযোগমূলক, আর কিছু প্রতিবেদনে আছে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার চেষ্টা। আমরা সবাই কমবেশি বাজারে যাই। না গেলেও এর সঙ্গে নানাভাবে সম্পর্কিত। নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ী হিসেবেও সম্পর্কিত অনেকে। তাঁদের দিকগুলোও দেখার রয়েছে। বিশেষত যেসব ব্যবসায়ী সংখ্যায় বেশি হলেও সংগঠিত নন, তাঁদের হাতে তো বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নেই। তাঁরাও অনেক সময় ভোক্তাসাধারণের মতো অসহায়ভাবে অভিযোগ করে থাকেন। সম্প্রতি ব্রয়লারের বাজারে এটি ঘটতে দেখা গেছে। কয়েকটি করপোরেট হাউস যে এ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সুবিধামতো ফায়দা লুটে থাকে, সেটাও ধরা পড়ল এবার। এ খাতে ফিডসহ উৎপাদন খরচ বেড়েছে, সন্দেহ নেই। তা সত্ত্বেও মাত্রাতিরিক্ত দামে তারা ব্রয়লার বিক্রি করছিল পাইকারদের কাছে। খুচরা পর্যন্ত পণ্যটি যেতে যেতে দাম বেড়ে গিয়েছিল অস্বাভাবিক। ব্রয়লারের দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা হয়ে যাচ্ছিল। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ যে, তারা এর রাশ টেনে ধরতে উদ্যোগী হয়েছে। বড় চারটি ব্রয়লার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান কীভাবে কী করছিল, সেটা এখন অনেকেই জানে। তারা দেখতে পেল, মূল জায়গায় হাত দেওয়াতেই ব্রয়লারের দাম কমতে শুরু করেছে। সঙ্গে ‘সোনালি’ বলে পরিচিত মুরগির দামও। এ জন্য বলা হয়ে থাকে, খুচরা বিক্রেতার কাছে গিয়ে অত চোটপাট করার দরকার নেই। তবে তাঁদের মধ্যেও মুনাফার প্রবণতা বেশি। প্রশ্ন হলো, এটা ব্যবসার উচ্চস্তর থেকে পরিবাহিত কিনা? ব্রয়লারের দাম কমিয়ে আনার ঘটনায় সেটাই কিন্তু প্রমাণ হলো।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরও এবার এগিয়ে এসেছে বাজারে। তারা ব্রয়লার, গরু-খাসির মাংসসহ ডিম-দুধ বিক্রি করছে ভর্তুকি দামে। এ কার্যক্রম অবশ্য চলছে রাজধানীর মাত্র কয়েকটি স্পটে। আর দ্রুতই ফুরিয়ে যাচ্ছে তাদের পণ্যসামগ্রী। এটা আসলে সরকারের প্রতীকী কার্যক্রম। ভালো হতো খাদ্যপণ্যের বাজারে জোরালোভাবে উপস্থিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অন্তত রমজানে একই ধরনের কার্যক্রম হাতে নিলে। মেগাশপগুলোর কোনো কোনোটি কিছু উদ্যোগ নিয়েছে অবশ্য। সেটাও প্রতীকী বলে বিবেচিত হবে। আরেকটি কথা উঠবে– রাজধানী আর বন্দরনগরীই তো বাংলাদেশ নয়। এসব পণ্যের চাহিদা তো অন্যান্য শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলেও রয়েছে। আমরা টিসিবি কার্যক্রমের কথাও জানি। সেটা অবশ্য আরেকটু বিস্তৃত। এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারী আটা, সয়াবিন, চিনিসহ কিছু পণ্য দুই দফায় পাবে এ রমজানে। স্বভাবতই সাশ্রয়ী দামে; আর সেখানেই শঙ্কা এ কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিয়ে। এখানেও মনিটরিং জরুরি। সেটা না থাকলে যত দিন যাবে, অভিযোগ বাড়বে তত। খাদ্য অধিদপ্তর ওএমএস চালিয়ে যাচ্ছে আগে থেকেই। এতে প্রধানত দেওয়া হয় স্বল্প দামে চাল। বিনামূল্যে চাল বিতরণ কর্মসূচিও রয়েছে সরকারের। দরিদ্র ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে নেওয়া হয়েছে এসব কর্মসূচি। সে জন্য এগুলোয় সুশাসন বেশি জরুরি। এ ক্ষেত্রে অনিয়মের যেসব খবর মাঝে মাঝে উঠে আসে, সেগুলোকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। এসব আরও ঘটছে কিনা, সেদিকে বরং দৃষ্টি দিতে হবে।