উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বায়ু দূষণ সবচাইতে বেশী। ছবি: প্রিয়.কম

বায়ু দূষণ যে ৮টি মারাত্মক ক্ষতি করছে আপনার

কে এন দেয়া
সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ২২:০৫
আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ২২:০৫

(প্রিয়.কম) প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৩ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হলো বায়ু দূষণ, জানা যায় Nature জার্নালে প্রকাশিত ২০১৫ সালের এক গবেষণা থেকে। এসবের মাঝে ৭৫ শতাংশ মৃত্যুই ঘটে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক থেকে, বাকি ২৫ শতাংশ হয় ফুসফুসের রোগে। 

শুধু তাই নয়, এত মৃত্যুর ৭৫ শতাংশ আবার ঘটে এশিয়া মহাদেশে, যেখানে বায়ু দূষণের মাত্রা ভয়াবহ- বিশেষ করে চীন এবং ভারতে। জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানোর ফলে বেশীরভাগ দূষণ হয়। গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্টের রিপোর্ট অনুযায়ী গ্লোবাল কার্বন এমিশনের পরিমাণ রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে এ বছর নাগাদ। 

বায়ু দূষণ এবং হৃদস্বাস্থ্যের মাঝে যে সম্পর্ক আছে এটা জানেন অনেকেই। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা এ ব্যাপারটাকে আরো শক্তপোক্ত করেছে যে দূষিত বায়ু বেশ কিছু দিক দিয়ে আমাদের ক্ষতি করতে সক্ষম। 

১) শুক্রাণুর ক্ষতি

বায়ু দূষণ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে স্পার্ম কোয়ালিটি কমে যায়, জানা গেছে নভেম্বরে তাইওয়ানের এক গবেষণা থেকে। গবেষকেরা তাইওয়ানে বসবাসরত ৬,৫০০ জন পুরুষের শুক্রাণুর উৎপাদন, সক্রিয়তা এবং বাহ্যিক অবয়ব পর্যবেক্ষণ করেন তিন মাস ধরে। তাদের বয়স ছিল ১৫ থেকে ৪৯ এর মাঝে। এরপর দুই বছর সময়ের মাঝে তাদের শুক্রাণু কীভাবে প্রভাবিত হচ্ছে তা দেখা হয়। বায়ু দূষণের কারণে অস্বাভাবিক আকার ও আকৃতির শুক্রাণু উৎপাদন হতে দেখা যায়। তবে বায়ু দূষণের মাঝে বাস করলে শুক্রাণুর সংখ্যা বেশী হতে দেখা যায়। গবেষকেরা বলেন, ত্রুটিপূর্ণ শুক্রাণু উৎপাদনকে সামাল দিতেই হয়ত এদের সংখ্যা বেশী হচ্ছে। 

ফ্র্যাকচার

যখন বায়ু দূষণের পরিমাণ বেশী থাকে, তখন হাড় ফ্যাকচার হবার প্রবণতা থাকে বেশী। ছবি: রিপন

২) হাড়ের ঘনত্ব কমে ফ্র্যাকচার হওয়া

বয়স্ক মানুষে অস্টিওপোরোসিস (বয়সের কারণে হাড়ের ঘনত্ব কমা) হলো হাড়ে ফাটল ধরার সবচাইতে বড় কারণ। এর ফলে প্রতি বছর বিশ্বে অন্তত ৮.৯ মিলিয়ন মানুষের হাড়ে ফ্র্যাকচার হয়। বায়ু দূষণের কারণে এই ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। ৬৫ বছরের বেশী বয়সী ৯২ লাখ মানুষের তথ্য নেওয়া হয়। জানুয়ারি ২০০৩ থেকে ডিসেম্বর ২০১০ এর মাঝে তাদের হাড় ফ্র্যাকচারের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। দেখা যায়, যখন বায়ু দূষণের পরিমাণ বেশী থাকে, তখন হাড় ফ্যাকচার হবার প্রবণতা থাকে বেশী। 

৩) স্ট্রোকের ঝুঁকি

প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ৫০ লাখ মানুষ মারা যায় স্ট্রোকের কবলে পড়ে। শুধু তাই নয়, অনেকে পক্ষাঘাতগ্রস্তও হয়ে যান। স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়ছে ইদানিং, গবেষকেরা ধারণা করছেন পরিবেশগত কারণ থাকতে পারে এর পেছনে। তারা স্ট্রোকের ওপর করা ৯৪টি গবেষণার তথ্য রিভিউ করেন। এসব গবেষণা করা হয় ১৯৪৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত। দেখা যায়, উচ্চমাত্রার বায়ু দূষণের আওতায় থাকা এবং স্ট্রোকের মাঝে সম্পর্ক বিদ্যমান। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বায়ু দূষণ সবচাইতে বেশী ছিল এবং সেখানে স্ট্রোকের পরিমাণও অতিরিক্ত বেশী হতে দেখা যায়। 

৪) কিডনীর রোগ

আমেরিকার যুদ্ধফেরত সৈন্যদের ওপর এক গবেষণায় দেখা যায়, বায়ু দূষণের কারণে কিডনির কাজে বাঁধা পড়ে, কিডনির রোগ হয় এমনকি কিডনি ফেইলিওর পর্যন্ত হতে পারে। সেপ্টেম্বর মাসের এই গবেষণায় দেখা যায় কম পরিমাণে বায়ু দূষণও কিডনিকে প্রভাবিত করতে পারে, আর দূষণ বাড়তে থাকলে ক্ষতির পরিমাণও সে অনুপাতে বাড়ে। 

৫) উচ্চ রক্তচাপ

স্পেন, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন এবং নরওয়ের ৪১ হাজারেরও বেশী মানুষের ওপর গবেষণায় দেখা যায়, বায়ু দূষণ বাড়ায় তাদের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বা হাইপারটেনশন। এক্ষেত্রে ওবেসিটির মতই ক্ষতিকর বায়ু দূষণের মাঝে বসবাস। গবেষণা শুরুর সময়ে তাদের কারোই হাইপারটেনশন ছিল না। কিন্তু পরে ফলোআপের সময়ে তারা হয় হাইপারটেনশনের রোগী ছিল বা রক্তচাপ কমানোর ওষুধ নিচ্ছিল। ১৫ শতাংশ মানুষে এ ব্যাপারটা দেখা যায়। মূলত যারা বায়ু দূষণযুক্ত এলাকায় থাকেন, অন্যদের তুলনায় তাদের হাইপারটেনশন হবার ঝুঁকি থাকে ২২ শতাংশ বেশী। 

হৃদরোগ

৫-৭ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকের পেছনে বায়ু দূষণকে দায়ী করা যায়। ছবি: নূর

৬) জন্মগত ত্রুটি

সম্প্রতি ইঁদুরের ওপর করা এক গবেষণায় দেখা যায়, গর্ভাবস্থায় বায়ু দূষণের মাঝে থাকলে প্রিম্যাচিওর বার্থ এবং জন্মের সময়ে ওজন কম হতে পারে। এ সময়ে ইঁদুরগুলো এমন বায়ুতে নিঃশ্বাস নিচ্ছিল যাতে জীবাশ্ম জ্বালানী পোড়ানো কণিকা ছিল, যা কিনা দূষিত এলাকাগুলোর মতই। দেখা যায়, গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে বায়ু দূষণের মাঝে থাকলে প্রিম্যাচিওর বার্থের ঝুঁকি থাকে ৮৩ শতাংশ। পরের দিকে বায়ু দূষণের কারণে ৫০ শতাংশ ইঁদুর শিশুর ওজন কমে ১১ শতাংশেরও বেশী। 

৭) মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

শুধু যে শরীরের ওপরেই বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে তা কিন্তু নয়। বায়ু দূষণ মানসিক সমস্যাও বাড়ায়। নভেম্বর মাসের এক গবেষণায় আমেরিকার ৬ হাজার মানুষের তথ্য নেওয়া হয়। দেখা যায়, বায়ু দূষণের পরিমাণ যত বেশী হয়, তাদের হতাশা, বিষাদ, অস্থিরতা এবং অন্যান্য নেতিবাচক অনুভূতির প্রকোপ ততই বেশী হয়। 

 ৮) হার্ট অ্যাটাক

দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেওয়ার ফলে হতে পারে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ, জানা যায় আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন থেকে। অ্যালকোহল, কফি বা এক্সারসাইজ যেভাবে হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী, বায়ু দূষণও সেভাবেই দায়ী, জানা যায় ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক গবেষণায়। ৫-৭ শতাংশ হার্ট অ্যাটাকের পেছনে বায়ু দূষণকে দায়ী করা যায়, বলেন গবেষকেরা। 

সূত্র: Live Science

প্রিয় লাইফ/ আর বি