
মারা গেছেন বাদী ও চার আসামি, ৩৫ বছরেও শেষ হয়নি অস্ত্র মামলার বিচার
চট্টগ্রামে একটি কলেজের গুদাম থেকে ককটেল, বিস্ফোরক ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার মামলার বিচার শেষ হয়নি ৩৫ বছরেও। ইতিমধ্যে মারা গেছেন মামলার বাদী, সাক্ষী ও চার আসামি। মামলার অন্যতম আসামি র্যাব-পুলিশের তালিকাভুক্ত ‘সন্ত্রাসী’ সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার (কাউন্সিলর) মামুনুর রশীদ মামুন ২২ বছর ধরে স্থগিতাদেশ নিয়ে আছেন। আড়াই বছর ধরে সেই আদেশটি উপস্থাপনের জন্য শুধু সময় চেয়ে যাচ্ছেন তাঁর আইনজীবী। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বর্তমানে বিচারাধীন মামলাটি। ১৪ সাক্ষীর মধ্যে নেওয়া হয়েছে মাত্র তিনজনের। সাক্ষীর জন্য মোট ২৫৮টি তারিখ পড়ে।
আইনজীবীরা জানান, অস্ত্র মামলায় ১৭ বছর একসঙ্গে চললে হবে ১০ বছর, আর বিস্ফোরক মামলায় সাজা হলে মৃত্যুদণ্ড কিংবা যাবজ্জীবন। যাবজ্জীবন সাজার মেয়াদ ৩০ বছর। সেই হিসেবে আসামিদের সাজার মেয়াদই পার হয়ে গেছে, কিন্তু বিচার শেষ হচ্ছে না।
পুলিশ সূত্র জানায়, নিজ দলের নেতা-কর্মী খুন, দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার কার্যালয়ে ঢুকে সাংবাদিকদের মারধর, পুলিশের সহকারী কমিশনার বশির হত্যাসহ ২১টি মামলার আসামি মামুনুর রশীদ। ২০০০ সালে তিনি ওয়ার্ড কমিশনার (বর্তমানে কাউন্সিলর) নির্বাচিত হন। দলীয় চাপের কারণে ২০০১ সালে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। দুই বছর জেল খেটে ২০০৩ সালে জামিনে মুক্তি পান। ২০০৪ সালে র্যাব গঠনের পর ভারতে পালিয়ে যান। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় এলে দেশে ফিরে আসেন। এরপর রাজনৈতিক বিবেচনায় বেশির ভাগ মামলায় তাঁর নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সাক্ষীরা হাজির না হওয়ায় খালাস পান বাকি মামলায়।
ঘটনার শুরু ১৯৮৯ সালের ৭ অক্টোবর। সেদিন চট্টগ্রাম নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজ থেকে একদল লোক মাইক্রোবাসে করে গিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে গোলাগুলি করে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এমইএস কলেজের সংসদ কক্ষের পাশের একটি কক্ষে কলেজ গুদামের মাটির নিচে বস্তাবন্দী করে রাখা ১টি কাটা রাইফেল, একনলা বন্দুক, ২২টি ককটেল, ৪টি হাত বোমা, বোমা তৈরির বিস্ফোরক উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ডবলমুরিং থানার তৎকালীন এসআই সামসুল হক বাদী হয়ে সমীর দাশ, মো. জহির, অশোক চৌধুরী, মামুনুর রশীদ, জাহিদ হোসেন, চন্দন কুমার ভৌমিক, কনক, লোকমান হোসেনসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
২২ বছরে একজনেরও সাক্ষ্য হয়নি
অস্ত্র ও বিস্ফোরকের এই মামলায় ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র তিনজনের সাক্ষ্য হয়েছে। সর্বশেষ ২০০৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এই মামলায় সাক্ষ্য দেন ডবলমুরিং থানার তৎকালীন এসআই সুলতান আহমেদ। এরপর আর হয়নি। ১৪ জনের মধ্যে ১০ জনই পুলিশ সদস্য। বাকি চারজন এমইএস কলেজের তৎকালীন শিক্ষক মোর্শেদ কুলী খান ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ব্যক্তি। এসব সাক্ষীদের হাজির করতে আদালত থেকে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে বারবার তাগাদাও চিঠি ইস্যু করা হলেও তাদের বর্তমান কর্মস্থলে পাওয়া যাচ্ছে না, পানিতে কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার তাঁদের শেষ কর্মস্থল জানা নেই বলে চিঠি দেওয়া হয়।
মারা গেছেন চার আসামি ও বাদী
মামলার ছয় আসামির মধ্যে জামিনে আছেন শুধু মামুন ও কনক। বাকির চার আসামি জাহিদ, সমীর, জহির ও চন্দন দীর্ঘদিন থেকে পলাতক। আসামিরা জীবিত নাকি মৃত, তা জানতে ২০২২ সালের ১০ আগস্ট তৎকালীন বিচারক পুলিশকে আদেশ দেন। তদন্ত শেষে একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি থানার এসআই সোমনাথ পাল আদালতকে জানান, সমীর দাশের ঠিকানায় যোগাযোগ করলে তাঁর ভাই সুমন কুমার দাস জানান, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। চন্দন কুমার ভৌমিকের আত্মীয় জানান, মারা গেছেন। ২০১৫ সালের ১৯ মে মারা যান জহির, যুক্তরাষ্ট্রে মারা যান জাহিদ।
এদিকে মামলার বাদী ও সাক্ষী ডবলমুরিং থানার এসআই সামসুল হক মারা যান ২০০৭ সালের ৬ জানুয়ারি।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা