
হিজরি নতুন বছর ও মহররম মাসের গুরুত্ব
আরবি হিজরি নতুন বছর ১৪৪৭ শুরু হয়েছে। হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মহররম। নতুন চাঁদ উঠলে হিজরি ক্যালেন্ডারের নতুন মাস শুরু হয়। হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস মহররম, শেষ মাস জিলহজ। ধারাবাহিকভাবে হিজরি ক্যালেন্ডারের মাসগুলো হলো, ১. মহররম, ২. সফর, ৩. রবিউল আউয়াল, ৪. রবিউস সানি, ৫. জমাদিউল আউয়াল, ৬. জমাদিউস সানি, ৭. রজব, ৮. শাবান, ৯. রমজান, ১০. শাওয়াল, ১১. জিলকদ, ১২. জিলহজ।
ইসলামে মহররম মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। এ মাস আল্লাহতায়ালার নিকট অনেক সম্মানিত ও মর্যাদার একটি মাস। এ মাসে বহু ঐতিহাসিক ফজিলতপূর্ণ ঘটনা ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। ৬১ হিজরির ১০ মহররম কারবালা প্রান্তরে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় দৌহিত্র, ন্যায়ের মূর্ত প্রতীক হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে কারবালার প্রান্তরে শাহাদত বরণ করেন। তার শহিদ হওয়াকে কেন্দ্র করে বর্তমানে আশুরার গুরুত্ব পেলেও ইসলামের ইতিহাসে এদিনে অসংখ্য তাৎপর্যময় ঘটনা রয়েছে। এ কারণে মুসলমানরা দিনটিকে বিশেষ ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে স্মরণ করে থাকেন।
মহররম হিজরি বছরের প্রথম মাস হওয়ায় এ মাসে আল্লাহতায়ালার নিকট প্রতিটি মুসলমানের একমাত্র চাওয়া-পাওয়া হলো তিনি যেন মুসলিম উম্মাহকে বছরজুড়ে রহমত বরকত ও কল্যাণ দ্বারা ঢেকে দেন।
যদিও ইসলামের অনেক আগে থেকেই এ মাসের ১০ তারিখ অতি সম্মানিত এবং ফজিলতপূর্ণ। এ দিনে আল্লাহতায়ালা হজরত আদম (আ.)-এর দোয়া কবুল করেন। হজরত নুহ (আ.)-এর জাতির লোকেরা আল্লাহর গজব মহাপ্লাবনে নিপতিত হওয়ার পর ১০ মহররম তিনি নৌকা থেকে ইমানদারদের নিয়ে দুনিয়ায় অবতরণ করেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ৪০ দিন পর ১০ মহররম সেখান থেকে মুক্তি লাভ করেন।
হজরত আইয়ুব (আ.) ১৮ বছর কঠিন রোগ ভোগ করার পর মহররমের এ দিনে আল্লাহর রহমতে সুস্থতা লাভ করেন। এ ধরনের আরো অনেক ফজিলতপূর্ণ ঘটনার সাথে মহররম মাস জড়িত।
ইসলামে মহররম মাসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলেই এ মাসে রোজা রাখা মহানবির (সা.) সুমহান আদর্শ।
বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সংস্কৃতিতে ও মুসলমানদের জীবনে হিজরি সনের গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ হিজরি সন কবে আসে কবে যায়, তা হয়ত আমাদের অনেকেরই জানা থাকে না।
ইসলামি আরবি বর্ষপঞ্জিকার সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের পুণ্যময় স্মৃতি, তাই যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের কাছে হিজরি সাল অনেক গুরুত্ব বহন করে আসছে।
যদিও মুসলমানদের রোজা, হজ, ইদ, কোরবানিসহ ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান হিজরি সনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বর্তমান যুগে তা কেবল রমজান ও ঈদের হিসাব রাখার মধ্যেই যেন সীমিত।
বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হয়ত জানেই না হিজরি সাল কি আর আরবি মাসগুলোর নাম। আসলে আরবি মাসগুলোর সাথে আমরা তেমন পরিচিত নই।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই হিজরি সনের শুভ সূচনা হয়। ইসলামি সন তথা হিজরি সন মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা থেকে মদিনা হিজরতের ঐতিহাসিক তাৎপর্যময় ঘটনার অবিস্মরণীয় স্মারক।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মহররম
- হিজরি বর্ষ