যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের (৪ জুলাই) এক মাস আগে দেশটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ভেটো (‘না’ ভোট) দিয়ে আটকে দেয়।
প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, গাজায় সব পক্ষকে মেনে চলার জন্য ‘একটি স্থায়ী, নিঃশর্ত ও দ্রুত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা’ দিতে হবে এবং হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীর হাতে থাকা সব ইসরায়েলি বন্দীকে সম্মানজনকভাবে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যদেশের মধ্যে ১৪টি দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা করায় সেটি বাতিল হয়ে যায়।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছিল, গাজায় মানবিক ত্রাণ পৌঁছাতে যেসব বাধা আছে সেসব বাধা এবং গাজার ওপর আরোপ করা সব নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে হবে; জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা যেন নিরাপদে বাধা ছাড়া ত্রাণ পৌঁছাতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এই ভেটোর ঘটনার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা দেন, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) চারজন বিচারককে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আনা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র শুধু গাজায় যুদ্ধবিরতি থামানোর প্রস্তাবে বাধা দেয়নি, বরং যাঁরা যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে চান, তাঁদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) প্রধান মিরিয়ানা স্পলিয়ারিচ গাজাকে ‘পৃথিবীর নরক থেকেও ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেছেন।
ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য হলো গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের চূড়ান্তভাবে উচ্ছেদ করা। এই নীতিকে টিকে থাকতে সাহায্য করছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন এবং আরব দেশগুলোর নীরবতা।
ইসরায়েলের সরকারে যাঁরা আছেন, তাঁরা তাঁদের এই সামরিক লক্ষ্য নিয়ে কোনো রাখঢাক করছেন না; বরং স্পষ্ট করেই বলে আসছেন, তাঁরা কী করতে চান।
গাজায় মানুষের জীবনধারণের জন্য যেসব মৌলিক জিনিস দরকার, যেমন পানি, বিদ্যুৎ, ঘরবাড়ি, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি হাসপাতাল—সবই ইসরায়েল ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন গাজায় ঠিকমতো কাজ করতে পারছে, এমন হাসপাতাল আছে মাত্র দুটি।
জাতিসংঘ বলছে, এ দুটি হাসপাতালকে নিরাপদ রাখতে হবে, কারণ প্রতিদিন গাজায় বিমান হামলা আর ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে বহু মানুষ মারা যাচ্ছে বা আহত হচ্ছে। এদের মধ্যে শিশু আর বৃদ্ধের সংখ্যা অনেক বেশি। জাতিসংঘ আরও জানাচ্ছে, প্রতিদিন গাজায় অপুষ্ট শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে।
এই অপুষ্টির প্রধান কারণ হলো ইসরায়েলের আরোপ করা খাদ্য অবরোধ। আন্তর্জাতিক অনেক সাহায্য সংস্থা এই অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে, কিন্তু ইসরায়েল তা গ্রাহ্য করেনি। বরং তারা নিজেরাই কিছু ‘খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র’ চালু করেছে।
এসব জায়গায় বহু ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিকে (যাঁদের মধ্যে নারীও রয়েছেন) ইসরায়েলি ট্যাংকে বসানো মেশিনগান দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।