ত্বকী, তনু ও সাগর-রুনি হত্যার বিচার কত দূর
পৃথিবীতে পিতার কাঁধে সন্তানের লাশকেই বেশি ভারী মনে হয়। বন্ধু রফিউর রাব্বি গত সাড়ে ১১ বছর এই অসহনীয় ভার বয়ে বেড়াচ্ছেন।
তাঁর সন্তানের নাম তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। চাষাঢ়ার এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল। ২০১৩ সালের ৭ মার্চ এ লেভেল পরীক্ষার ফলাফলে পদার্থবিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৯৭ পেয়েছিল ত্বকী, যা সারা দেশে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া ও লেভেলেও সে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন পরীক্ষায় দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিল।
এ রকম একজন মেধাবী তরুণের সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না। তারপরও কেন তাঁকে খুন করা হলো? নারায়ণগঞ্জের গডফাদার হিসেবে যাঁরা পরিচিত, সেই ওসমান পরিবারের সন্ত্রাস ও দখলবাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি।
নাগরিক কমিটির নেতা হিসেবে তিনি সেখানকার নাগরিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছেন, এখনো করছেন। নাগরিক আন্দোলনের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন থাকলেও বেঁকে বসে ওসমান পরিবার। তারা তখন ভীষণ ক্ষমতাধর।
এরপরই ঘটে ত্বকী হত্যার ঘটনা। কী বীভৎস ও নৃশংস ছিল সেই হত্যাকাণ্ড!
৮ মার্চ রাতেই ত্বকীর বাবা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় আসামি অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন এবং ১৮ মার্চ জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ত্বকী হত্যার জন্য তিনি শামীম ওসমান ও তাঁর ছেলে অয়ন ওসমানসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে একটি অবগতিপত্র দেন। পুলিশের তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে র্যাব ত্বকী হত্যা মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে।
ওই বছরের ৭ আগস্ট র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা শহরের আল্লামা ইকবাল রোডে আজমেরী ওসমানের মালিকানাধীন ‘উইনার ফ্যাশন’-এ অভিযান চালিয়ে রক্তমাখা জিনস প্যান্ট, পিস্তলের বাঁট ও ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামাদিসহ বিপুল পরিমাণ সামগ্রী উদ্ধার করে। অভিযানের সময় অফিসের দেয়াল, সোফা, আলমারিসহ আসবাবপত্রে অসংখ্য বুলেটের দাগ পাওয়া যায়। নারায়ণগঞ্জে অন্যতম টর্চার সেল ছিল উইনার ফ্যাশন।
র্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল জিয়াউল আহসান (বর্তমানে আটক) সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘তদন্তে সন্দেহভাজন হিসেবে ওসমান পরিবারের সদস্য আজমেরী ওসমানসহ ১১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ত্বকী হত্যায় অংশ নেওয়া অন্য ১০ জন হলেন রাজীব, কালাম শিকদার, মামুন, অপু, কাজল, শিপন, জামশেদ হোসেন, ইউসুফ হোসেন ওরফে লিটন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর ও তায়েবউদ্দিন ওরফে জ্যাকি। যেকোনো দিন এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’