অন্তর্বর্তী সরকারে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজন

ডেইলি স্টার মাহফুজ আনাম প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:৪৮

গত ৯ সেপ্টেম্বর দ্য ডেইলি স্টার আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় উৎপাদন, ব্যাংকিং ও তথ্য-প্রযুক্তিসহ (আইটি) বিভিন্ন শিল্প খাতের শীর্ষ নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সহায়তা চেয়ে জরুরি আবেদন জানিয়েছেন। তাদের মতে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পুলিশের স্বাভাবিক উপস্থিতি না থাকা এবং শিল্প এলাকায় সার্বিকভাবে নিরাপত্তার অভাবে খানিকটা নিরুপায় হয়েই তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতির অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা পাঁচটি শিল্প অঞ্চলের কথা উল্লেখ করেছেন—আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা। এই পাঁচ এলাকায় আমাদের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাতের ভিত্তিমূল, যার সুরক্ষা দেওয়া সর্বোচ্চ প্রাধান্যের বিষয়। সাধারণত তারা সেনাবাহিনীর সহায়তা চান না। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে এখন তারা এটাকে জরুরি প্রয়োজন হিসেবে দেখছেন।


ওই এলাকাগুলোতে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বাস্তবতা হলো, আগের সরকারের আমলে নিজেদের ভূমিকার কারণে পুলিশ ব্যাপকভাবে বিতর্কিত এবং তারা জনসম্মুখে যেতে ও প্রয়োজন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধায় পড়ছে। পুলিশের এই আচরণে আমাদের কারখানাগুলোতে তাণ্ডব চালানো অপরাধীচক্র নিঃসন্দেহে ভুল বার্তা পাচ্ছে।


জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে গিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকতে চাওয়া সরকারের পতনের পর এক ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশকে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করায় এই বাহিনীর প্রতি সবার ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিক হিসাব মতে, প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ পুলিশের কতিপয় সদস্যের নির্বিচার গুলিতে নিহত হয়েছেন। এর ফলে পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণা আরও হাজার গুণ বেড়েছে। আমাদের সীমান্তরক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনী বিজিবি—অতিরিক্ত জনসমাবেশ বা বিক্ষোভ মোকাবিলায় যাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই—সেই বাহিনীকে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অংশে বিক্ষোভ মোকাবিলায় মোতায়েন করায় কোনো উপকার তো হয়নি, বরং বেড়েছে লাশের স্তূপ। এসব ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ সঞ্চার হয়েছে এবং আগের সরকার ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার তীব্র ইচ্ছা জাগ্রত করেছে। দোসরদের মধ্যে অন্যতম রাজনীতিবিদরা, যাদের মধ্যে ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর একটি অংশও অন্তর্ভুক্ত। তারা রাজনৈতিক পরিচয়ের সুবিধা নিয়ে দেশে লুটপাট চালানো ছাড়া আর কিছুই করেননি। সাবেক ক্ষমতাসীন সরকারের তথাকথিত 'বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা' এর এক উজ্জ্বল উদাহরণ, যাকে 'ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির প্রতিনিধি' হিসেবে আখ্যায়িত করাই বেশি উপযুক্ত। কারণ তিনি কখনো বেসরকারি খাতের সার্বিক মঙ্গলের জন্য কাজ করেননি। বরং পদমর্যাদার সুযোগ নিয়ে নিজের ও তার চাটুকারদের ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধি করেছেন।



এসব কারণে বেসরকারি খাত সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণাটি দাঁড়িয়েছে যে, এখানে সবাই অন্যায়ভাবে সুবিধাভোগী। এ ধরনের মনোভাব সমাজের একটি শ্রেণিকে প্রভাবিত করছে, বিশেষত, তরুণ-তরুণীদের। আবার সরকারের একটি অংশ এমন মত প্রকাশ-প্রচার করেছেন, যাতে মনে হয় অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে, আধুনিকায়ন করতে ও সার্বিকভাবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বেসরকারি খাতের ভূমিকার বিষয় সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকার অবগত নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে বেসরকারি খাতের কোনো প্রতিনিধি না থাকার ব্যাপারটিকে অনেকেই এই মন-মানসিকতার প্রতিফলন হিসেবে বিবেচনা করছেন। আমাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির জন্য এই মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে এবং দ্রুতই তা করতে হবে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বেসরকারি খাত থেকে অন্তত একজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ জানাই।


এক্ষেত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি মনে রাখতে হবে, তা হলো, বেসরকারি খাতের সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আগের সরকারের বদান্যতা পায়নি। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ছিলেন যারা নীতিনির্ধারণে প্রভাব রাখতেন এবং মূলত তারাই এ ধরনের সুবিধাগুলো পেতেন। বিপরীতে অসংখ্য ব্যবসায়ী তাদের সঙ্গে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ক্ষতির শিকার হন। তারা ঋণখেলাপি না করে এবং সময়মতো কর পরিশোধ করেও প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হয়েছেন। কারা প্রকৃতপক্ষেই বেসরকারি খাতের সদস্য, আর কারা স্বজনপ্রিয়তার সুযোগ নেওয়া উদ্যোক্তা—তাদের মধ্যে বিভাজন খুবই জরুরি এবং এই কাজটি দ্রুতই গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে।


মালিকদের ব্যক্তিগত পরিচয় যাই হোক না কেন, কারখানাগুলো জাতীয় সম্পদ। মালিকদের বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তারা কীভাবে এগুলো নির্মাণ করেছেন, সেটা বিবেচ্য বিষয়। তবে সেগুলো নির্মাণে ব্যক্তিগত সম্পদ না ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ ব্যবহার করা হয়েছে, তা না ভেবে সামগ্রিকভাবে সেগুলোকে বাংলাদেশের সম্পদ হিসেবেই দেখা উচিত। কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্বে নেওয়া হয়নি। এর অকাট্য প্রমাণ হলো সাবেক ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি বা যারা তাদের চাটুকারিতা করে অন্যায্য সুবিধা পেয়ে, সন্দেহজনক কর রেয়াত পেয়ে বা সুষ্ঠুভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কযুক্ত নয়, এমন অবৈধ কাজ করে সম্পদের মালিক হয়েছেন, তাদের মালিকানাধীন কারখানার প্রতি মানুষের প্রতিক্রিয়া।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও