ডোনাল্ড লুর সফরের বার্তাটা বোঝা দরকার

যুগান্তর ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২৪, ১০:৪৩

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বিষয়াদি দেখভালে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত। ভারত, বাংলাদেশসহ এতদঞ্চলের প্রায় সব দেশের নানা বিষয়ে তিনি অবগত থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় তার সম্পৃক্ততার গুরুত্ব ব্যাপক। দেশে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি সরকারি দল, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে সঙ্গে নিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে তার তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বিদেশি পর্যবেক্ষক প্রেরণে তার ভূমিকা অবশ্যই প্রশংসনীয়। সব দলের অংশগ্রহণে অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তার অভিপ্রায় ছিল ইতিবাচক। নির্বাচনের পর ভোটার সংখ্যা, দলীয় অংশগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে দেশে-বিদেশে নানা প্রচারণার বিষয়টি বহুল আলোচিত। সেসময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পরাশক্তির অযাচিত মন্তব্য ও হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট ও মানবাধিকার বিষয়ে বাংলাদেশে অবস্থানরত উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর দৌড়ঝাঁপ ছিল চোখে পড়ার মতো। রাষ্ট্রদূতদের প্রকাশ্যে কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কার্যকলাপও লক্ষ করা যায়। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞাসহ নানামুখী কার্যকলাপ নিয়ে দেশে অন্তহীন কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। নির্বাচনে ৪২ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি নিয়েও বেশকিছু মুখরোচক কথাবার্তা শোনা যাচ্ছিল।


নির্বাচনের পর মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফর নিয়েও অনেক গুঞ্জন শোনা যায়। কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন, নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমান সরকারকে অনেকটা বেকায়দায় ফেলবে। নির্বাচনবিরোধী বা ভোটবর্জনে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি-দল-প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও বক্তব্য প্রদান অব্যাহত ছিল। মাঠে-ময়দানে-সভা-সমাবেশে এসব বক্তব্যে জনগণ ছিল উদ্বিগ্ন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনসহ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে প্রশমিত হয়। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীও মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ফিরতি চিঠি মারফত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, এসব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সমাপ্তি ঘটিয়ে ডোনাল্ট লুর সফর সরকারের পক্ষেই গেছে বলে বিজ্ঞমহলের ধারণা।


এ সফরের প্রাক্কালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘বাংলাদেশ সফরে এসে গত দুদিনে আমি দুই দেশের জনগণের মধ্যে পুনরায় আস্থা স্থাপনের চেষ্টা করছি। আমরা জানি, গত বছর বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অনেক টেনশন ছিল। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলাম। এতে কিছু টেনশন তৈরি হয়। আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক। আমরা সামনে তাকাতে চাই, পেছনে নয়। আমরা সম্পর্কোন্নয়নের উপায় খুঁজে বের করতে চাই। আমাদের সম্পর্কের পথে অনেক কঠিন বিষয় রয়েছে-র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার ও ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়ন। কিন্তু কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য ইতিবাচক সহযোগিতার ওপর ভর করে এগিয়ে যেতে চাই।’


কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন ঘিরে মানবাধিকার, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের মতপার্থক্য দেখা দেয়। অবাধ, নিরপেক্ষ ও নির্বিঘ্ন নির্বাচনের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণাও দেয়। ফলে নির্বাচন শেষ হওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় ডোনাল্ড লুর এবারের সফর সম্পর্কোন্নয়নের ইচ্ছার ইঙ্গিত বলেই মনে করা হচ্ছে। তার সফরে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক এক নতুন মোড় নিয়েছে। তার বক্তব্যেই এর স্পষ্ট আভাস পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আর কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। লুর এ সফর সরকারকে অনেক স্বস্তি দেবে। চলমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র উভয়পক্ষই উভয়ের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখতে আগ্রহী, যার পেছনে কাজ করছে উভয় দেশের জাতীয় স্বার্থ। বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর কারণে অর্থনীতিতে বড় বাজার, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানকে যুক্তরাষ্ট্র কাজে লাগাতে চায়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও