জাপানের সঙ্গে ইপিএ চুক্তিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সুযোগ
অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি বা ইপিএ হলো বিভিন্ন দেশের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য এলাকা বা এফটিএ তৈরির পরিকল্পনা। অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব বিষয়টি বোঝার আগে আমাদের মুক্ত বাণিজ্য বিষয়টি বুঝতে হবে। কারণ দেশের বেশির ভাগ মানুষই এসব নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না। গ্লোবাল ভিলেজের এ যুগে কোনো একটি দেশের জনগণ অগ্রগতির সঙ্গে তাল না মেলালে স্বাভাবিকভাবেই দেশ পিছিয়ে পড়বে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই এসব বিষয়ে উদাসীন। বৈদেশিক নানা চুক্তির মাধ্যমে দেশের লাভ-ক্ষতির বিষয়টি না বুঝলে দেশের উন্নয়ন এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জমা-খরচের হিসাবও কখনো মেলাতে পারবেন না তারা।
আশার কথা হলো, ‘মুক্ত বাণিজ্য’ বিষয়ে আমাদের দেশের আমদানি-রফতানি ব্যবসায় জড়িতরা ভালো ধারণা রাখেন। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) স্বাক্ষর করা সদস্যদেশগুলোর একটি বাণিজ্য ব্লকে অন্তর্ভুক্তকৃত এলাকা হলো মুক্ত বাণিজ্য এলাকা। বাণিজ্যে বাধা, আমদানি কোটা, শুল্ক কমাতে এবং একে অন্যের সঙ্গে পণ্য ও পরিষেবার বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য এ ধরনের চুক্তিগুলোর মধ্যে অন্তত দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিকভাবে এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকে।
অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির মাধ্যমে দেশ দুটির মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য করার পরিকল্পনা নেয়া ও তা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে উভয় দেশ লাভবান হয়। সম্প্রতি জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি বা ইপিএ হওয়ার বিষয়ে তোড়জোড় চলছে। ২০২৫ সালের মধ্যে উভয় দেশের মধ্যে এ চুক্তি সম্পাদনের কথা রয়েছে।
জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু দেশ হিসেবে জাপান নানা ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বের অন্যতম ধনী এবং তথ্য-প্রযুক্তিতে অনবদ্য জাপান ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী। জাপানের বাণিজ্যিক অংশীদার ও বিনিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে সবচেয়ে কম শর্তসাপেক্ষে দারিদ্র্য বিমোচন, স্বনির্ভরতা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স (ওডিএ) অনুমোদন করেছে জাপান। যুগের পর যুগ ধরে উভয় দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা শক্তিশালী হয়েছে। আগামীতে এ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে। ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিজ দেশে সফরের আমন্ত্রণ জানায় জাপান। জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্কের শুরুতে সেই সফর পরবর্তী সময়ে সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তে পরিণত হয়।
৫১ বছরের দীর্ঘ যাত্রায় পরীক্ষিত বন্ধু দেশ জাপান উদারচিত্তে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুনীল অর্থনীতি, মানবসম্পদের উন্নয়ন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করে আসছে। বর্তমানেও জাপানের বহু বিনিয়োগ এবং মেগা প্রকল্প চালু রয়েছে বাংলাদেশে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- অর্থনৈতিক অংশীদার
- মুক্ত বাজার