মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয়ের বঙ্গবন্ধু
“একাত্তরের ৩ জুন। বিকেলে পিএআই-এর ফ্লাইটে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ল্যান্ড করি ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে। এরপরই গ্রেফতার হই। আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যান্টনমেন্টের এক নির্জন স্থানে। ওখানে একটা ছোট্ট রুমে আটকে রাখে। খুব অন্ধকার রুমটায়। গাদাগাদি করে অনেকগুলো লোক মেঝেতে শুয়ে আছে।
অনেকক্ষণ পর দরজায় আওয়াজ।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলম সাব কোন হে?
উঠে দাঁড়ালাম, সামনে গেলাম।
‘আপ বাহার লিকে’।
বাইরে গেলাম। রাত তখন। চারপাশে খানিক চাঁদের আলো। হেঁটে যাচ্ছি। এমন সময় পেছন থেকে এক সোলজার লাঠি দিয়ে দড়াম করে একটা বাড়ি মারে। পড়তে গিয়েও পড়লাম না।
সামনে আরও আট-দশ জন সোলজার। ওরা আমার চারদিকে ঘিরে দাঁড়ায়। এরপর আমার পিঠে লাঠির বাড়ি দিতে থাকে। সবাই মিলেই মারছে। শক্তি তখনো অনেক। সব সহ্য করেও দাঁড়িয়ে থাকি।
ওরা মারছে আর বলছে, ‘শালা শেখ মুজিবকা বাচ্চা।’
আবার মারছে আর একেকজন বলছে, ‘শালা শেখ মুজিবকা বাচ্চা।’
শেখ মুজিবের ছেলে বা সন্তান আমি! শুনে কেন জানি ওই মারটাই আমার কাছে গর্বের হয়ে ওঠে। আজ পর্যন্ত যার জন্য আমি গর্ববোধ করি। এই অনুভূতিটা ঠিক বলে বোঝাতে পারব না।”
মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে কতটা অনিবার্য ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা আরেকটি অজানা ঘটনার মাধ্যমে তুলে ধরেন বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম (এখন প্রয়াত)। একাত্তরে তিনি ছিলেন এয়ারফোর্সের ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট। পরে জয়েন করেন কিলোফ্লাইট অপারেশনে।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একটি স্মৃতি তিনি তুলে ধরেছিলেন এভাবে, “স্বাধীনতা লাভের পর রাশিয়ান সরকার বঙ্গবন্ধুকে একটি এয়ারক্রাফট উপহার দেয়। তেজগাঁও বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই প্লেনের চাবিটি বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুও তখন ওই চাবি আমার হাতে তুলে দিয়ে প্লেনটি দায়িত্বের সাথে পরিচালনা করতে বলেন। পাশাপাশি একসময় ওই প্লেনে চড়ারও ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।
১৯৭৪ সালের ঘটনা। ফ্লাইটে বঙ্গবন্ধুকে ইন্ডিয়ায় নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়ে আমার ওপর। তার আগেই গ্রুপ ক্যাপ্টেন খন্দকার সাহেব আমাকে পাঠান বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে। বললেন, ‘তুমি তাকে জিজ্ঞেস করে আসো প্লেনে কী খেতে চান। বিমানবাহিনী থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্য কোনো কিছুরই কমতি রাখতে চাই না।’
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে গেলাম। শেখ কামালকে আগেই ফোন করা ছিল। তার স্ত্রী সুলতানা কামালের ক্লাসমেট ও ক্লোজফ্রেন্ড ছিল আমার ছোট বোন দুরান কাশেম।
আমি যেতেই কামাল বঙ্গবন্ধুর কাছে নিয়ে গেলেন। উনি লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরা। চেয়ারের ওপর পা দিয়ে বসে বসে খাচ্ছেন। শেখ হাসিনাসহ ফ্যামিলির সকলেই সেখানে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন