‘জ্ঞানতাত্ত্বিক সহিংসতা’ ও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়

বিডি নিউজ ২৪ এম. টি. ইসলাম প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭:২২

সরল ভাষায়, ‘জ্ঞানতাত্ত্বিক সহিংসতা’ (এপিস্টোমোলোজিক্যাল ভায়োলেন্স) হলো জ্ঞানতত্ত্ব নির্মাণ ও চর্চার মাধ্যমে অন্য দল বা গোষ্ঠীকে ভুলভাবে উপস্থাপন, হেয় করা বা ক্ষতির মুখে ঠেলে দেওয়ার অভিপ্রায়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জ্ঞানতাত্ত্বিক কার্যক্রম। কানাডার ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত অধ্যাপক থমাস লিও মনোবিজ্ঞান গবেষণায় প্রথম এই পরিভাষা ব্যবহার করেন।


পরে সমালোচনা তত্ত্ব (ক্রিটিক্যাল থিওরি) ও উত্তর-ঔপনিবেশিক তত্ত্বের (পোস্টকলোনিয়্যাল থিওরি) গবেষকেরা এই পরিভাষা ব্যবহার করে এটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন। মিশেল ফুকো, এডওয়ার্ড সাঈদ এবং গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক তাদের মধ্যে অন্যতম।


মিশেল ফুকো জ্ঞানকে ক্ষমতার একটি উৎস হিসেবে দেখতেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, কীভাবে জ্ঞানতাত্ত্বিকতা ব্যবহার করে সমাজে একদল অন্য দল বা গোষ্ঠীকে শোষণ করে। অন্যদিকে, ‘ওরিয়েন্টালিজম’ ধারণার প্রবক্তা এডওয়ার্ড সাঈদ দেখিয়েছেন, কীভাবে ঔপনিবেশিক শক্তি জ্ঞান সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জ্ঞানতাত্ত্বিক সহিংসতা চালিয়ে থাকে।


প্রায় কাছাকাছি দৃষ্টিকোণ থেকে গায়ত্রী স্পিভাকও জ্ঞানতাত্ত্বিক সহিংসতা ব্যাখ্যা করেছেন। তার বহুল আলোচিত প্রবন্ধ ‘ক্যান দ্য সাব-অলটার্ন স্পিক?’-এ তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে ঔপনিবেশিক জ্ঞানব্যবস্থা সাব-অলটার্নদের মতামতকে দমিয়ে রাখে।


এই তাত্ত্বিকদের আলোচনা থেকে দেখা যায়, জ্ঞানতাত্ত্বিক সহিংসতার প্রক্রিয়ায় দুটি স্পষ্ট পক্ষ বিদ্যমান—‘উর্ধ্বতন’ ও ‘অধস্তন’। এক পক্ষ প্রচলিত জ্ঞানতত্ত্বকে ব্যবহার করে অন্য পক্ষ সম্পর্কে সমাজের ধারণা নিয়ন্ত্রণ করে। ‘সহিংসতা’ শব্দটির মধ্যে শারীরিক আক্রমণের ধারণা থাকলেও, জ্ঞানতাত্ত্বিক সহিংসতা সবসময় শারীরিক নয়; বরং অনেক ক্ষেত্রে তার চেয়েও ভয়ঙ্কর।


এ ধরনের সহিংসতায় মূলত সমাজের শিক্ষিত, অভিজাত ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী যুক্ত থাকে। অর্থাৎ, সমাজে যাদের প্রভাব আছে তারাই সাধারণত এই ধরনের সহিংসতায় অংশ নেয়। তারা নতুন নতুন বয়ানের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী সম্পর্কে বিদ্বেষপূর্ণ ও হেয়মূলক জ্ঞান তৈরি করে। যার ফলে সমাজে বৈষম্যমূলক বাইনারি বিভাজন সৃষ্টি হয়। যেমন, ‘গ্রামের মানুষ মানেই খ্যাত’, ‘হিন্দু মানেই ভারতপন্থী’, ‘হিন্দু মানেই নৌকায় ভোট দেয়’, ‘হিন্দু মানেই আওয়ামী লীগপন্থী’, ‘পাহাড়ি মানেই বিদ্রোহী’, ‘পাহাড়ি মানেই বাংলাদেশবিরোধী’।


সমাজে প্রতিষ্ঠিত এমন অনেক বয়ান বিরাজমান, যা স্পষ্ট জ্ঞানতাত্ত্বিক সহিংসতার উদাহরণ। এই আলোচনার উদ্দেশ্য যেহেতু সংখ্যালঘুদের ওপর সংগঠিত জ্ঞানতাত্ত্বিক সহিংসতা বিশ্লেষণ করা, তাই এখানে কেবল সংখ্যালঘুদের ঘিরে যে সহিংসতা, সেটিই উল্লেখ করা হয়েছে। সমাজের ক্ষমতাসীনরা নিজেদের সুবিধার্থে এ ধরনের জ্ঞান তৈরি করে। যুগের পর যুগ সমাজের প্রভাবশালীরা এই জ্ঞানতাত্ত্বিক ভিত্তি নির্মাণ করেছে, যার মাধ্যমে তারা অধস্তনদের দমিয়ে রেখেছে এবং তাদের ওপর সামাজিক নিপীড়ন চাপিয়ে দিয়েছে।


যেমন, স্পিভাক দেখিয়েছেন কীভাবে ঔপনিবেশিকদের তৈরি জ্ঞানচর্চার পদ্ধতি উপনিবেশগুলোতে সেখানকার জনগোষ্ঠীর মতামত দমিয়ে রেখেছে এবং কীভাবে ওই জ্ঞানতাত্ত্বিকতার ভিত্তিতে তারা তাদের ঔপনিবেশিকতাকে ন্যায্যতা প্রদান করেছে, অন্যায্যতাকেও ন্যায্য বলে প্রতিষ্ঠা করেছে।


‘জ্ঞানতাত্ত্বিক সহিংসতা’ নিয়ে বোঝার সুবিধার্থে শুধু নামের কারণে কাউকে ভারতপন্থী হতে হয় কিনা তেমন একটি বিতর্কের উল্লেখ করা যায়। যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আলোচনা ওই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আপাতদৃষ্টিতে শারীরিক ক্ষতি করেনি, তবুও সমাজে এই সম্প্রদায় সম্পর্কে একটি নতুন নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিয়েছে, বা পূর্বে বিদ্যমান ধারণাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে। এই মন্তব্য সমাজে একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছে, যা সামাজিক সম্প্রীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও