রাজনৈতিক অস্থিরতা, বেকারত্ব ও শ্রমিকের করুণ আর্তি

www.ajkerpatrika.com চিররঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৯

দেশে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ে, তখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষের জীবন ও জীবিকা। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে বলে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা আওয়াজ তুললেও জনমনে সংশয় দূর হচ্ছে না। বরং ফেব্রুয়ারি যতই এগিয়ে আসছে, রাজনৈতিক বিরোধ, অস্থিতিশীলতা ও সহিংসতা ততই বাড়ছে। এর ফলে দেশের শ্রমজীবী মানুষ সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অথচ ২০২৪ সালের আগস্টে দেশে ‘বৈষম্য থাকবে না, কোটা থাকবে না, চাকরি হবে, কর্মসংস্থান হবে, শিল্প হবে’–এমন অনেক প্রতিশ্রুতির সুরে নতুন আশার আলো দেখেছিলেন বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষ। কিন্তু আজ সেই আশার প্রতিধ্বনি যেন এক নিষ্ঠুর প্রহসনে পরিণত হয়েছে। যে অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রতি অঙ্গীকার করেছিল বৈষম্যহীন অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের, বাস্তবে তা যেন উল্টো পথে হাঁটছে। বিশেষত, যাঁরা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, সেই শ্রমিক শ্রেণি আজ কাজ হারিয়ে বেকারত্বের অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছেন।


যে শ্রমিকেরা দিনের পর দিন কারখানার ধোঁয়া ও ঘামের গন্ধে নিজেদের জীবনকে নিঃশেষ করেছেন, সেই শ্রমিকদেরই এখন অন্নসংস্থানের অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরেছে। তাঁরা যাদের জন্য অর্থনীতি সচল, যাঁদের হাতের ছোঁয়ায় ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা পোশাক বিদেশের বাজারে জায়গা করে নেয়, আজ সেই হাতগুলোই অব্যবহৃত, সেই মুখগুলোই ক্ষুধার্ত।


বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্প দীর্ঘদিন ধরে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান ভিত্তি। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সরাসরি এই খাতে কাজ করেন এবং আরও ২ কোটি মানুষ পরোক্ষভাবে এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত ১৪ মাসের চিত্র যেন এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দলিল। বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৪২ জন শ্রমিক কর্মহীন হয়েছেন। এই সংখ্যাগুলো কেবল পরিসংখ্যান নয়—এগুলো লক্ষাধিক পরিবারের চোখের পানি, অসহায়তার নীরব চিৎকার।


সবচেয়ে বড় আঘাত লেগেছে সাভারে, যেখানে ২১৪টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১২২টি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৩১ হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছেন। বড় কারখানাগুলোর মধ্যে যেমন ছেইন অ্যাপারেলস, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন বা সাফওয়ান আউটারওয়্যার—সবই আজ অতীতের নাম। এরপরের অবস্থান গাজীপুরে, যেখানে ৭২টি কারখানা বন্ধ হয়ে ৭৩ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মহীন। বেক্সিমকো গ্রুপের ১৩টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া মানে শুধুই অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং হাজার হাজার পরিবারের জীবনে অনিশ্চয়তার অন্ধকার নেমে আসা। অবশ্য বেক্সিমকোর কারখানাগুলো আগামী মাসে চালু হচ্ছে। এতে ২৫ হাজার শ্রমিক আবার তাঁদের কাজ ফিরে পাবেন।


কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার এই ঢেউয়ের পেছনে আছে একাধিক কারণ—আন্তর্জাতিক বাজারের মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বায়ারদের অনিশ্চয়তা এবং স্থানীয় আর্থিক সংকট। বিদেশি ক্রেতারা নির্বাচিত সরকারের স্থিতিশীলতা না দেখে অর্ডার দিতে ভয় পাচ্ছেন, ফলে


ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলো টিকতে পারছে না। একদিকে অর্ডারের ঘাটতি, অন্যদিকে শ্রম আইন সংশোধনের মতো বিষয়গুলো মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের ওপর নতুন চাপ তৈরি করেছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান বাধ্য হয়ে উৎপাদন কমাচ্ছে বা বন্ধ করে দিচ্ছে। কিন্তু এসবের সবচেয়ে বড় মূল্য দিচ্ছেন শ্রমিকেরা। তাঁরা হারাচ্ছেন চাকরি, হারাচ্ছেন আয়, হারাচ্ছেন মর্যাদা—সবচেয়ে বেশি হারাচ্ছেন জীবনের নিশ্চয়তা।


পোশাকশিল্পের এই সংকটে আরেকটি দুঃখজনক বিষয় একের পর এক রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ড। গত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) অবস্থিত অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেড বা আল হামিদ টেক্সটাইলসে ভয়াবহ আগুনে ৯ তলা ভবনের ৫, ৬ ও ৭ তলা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ১৭ ঘণ্টা ধরে চলা এই আগুনে পুড়ে গেছে বিপুল কাপড় ও কাঁচামাল। শত শত শ্রমিক হঠাৎ কাজ হারিয়েছেন।


যদিও কর্তৃপক্ষ ৪৫ দিনের লে-অফ ঘোষণা দিয়ে বেতন চালু রাখার আশ্বাস দিয়েছে, বাস্তবে তা অনেক সময়ই ভেস্তে যায়। একটি কারখানার আগুন মানে শুধু ভবন পোড়া নয়, এটি শত শত স্বপ্নের মৃত্যু।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও