গণনাবিধির ছায়ায় ভাঙা সম্পর্ক ও নতুন বৈষম্য

জাগো নিউজ ২৪ ড. মতিউর রহমান প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১০

একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে, ডিজিটাল প্রযুক্তি মানব সমাজের কাঠামোকে এক মৌলিক রূপান্তরের পথে নিয়ে এসেছে। ইন্টারনেট, সামাজিক মাধ্যম এবং স্মার্টফোন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং তারা আমাদের সামাজিক কাঠামো, মানবিক সম্পর্ক এবং ক্ষমতার বিন্যাসকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করছে। সমাজবিজ্ঞানের নতুন শাখা হিসেবে ডিজিটাল সমাজবিজ্ঞান এই পরিবর্তনগুলো বোঝার চেষ্টা করে।


এই ধারা আমাদের শেখায় যে প্রযুক্তি কোনো নিরপেক্ষ শক্তি নয়, বরং এটি সমাজের বিদ্যমান কাঠামোকেই প্রতিফলিত করে এবং একই সঙ্গে নতুন সামাজিক বাস্তবতা তৈরি করে। বাংলাদেশে, যেখানে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ এবং স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা হুঁ হুঁ করে বাড়ছে, সেখানে ডিজিটাল সমাজের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত—প্রযুক্তির এই অনুপ্রবেশ আমাদের দৈনন্দিন জীবন, অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যে জটিল সুযোগ ও চ্যালেঞ্জগুলো তৈরি করছে, তা বিশ্লেষণ করা এখন সময়ের দাবি।


ভার্চুয়াল জীবন ও বিখণ্ডিত আত্মপরিচয়ের নির্মাণ


ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মগুলো আজ মানুষের আত্মপরিচয় (Identity) তৈরি ও প্রদর্শনের প্রধান মঞ্চ হয়ে উঠেছে। প্রথাগত সমাজে একজন মানুষের পরিচয় নির্ধারিত হতো তার পরিবার, পেশা, ধর্ম বা ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে, যা ছিল একটি স্থিতিশীল ভিত্তি। কিন্তু ভার্চুয়াল জগতে এই পরিচয় হয়ে উঠেছে বহুমাত্রিক, তরল এবং প্রদর্শনীমূলক। মানুষ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে—যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটক—ভিন্ন ভিন্ন 'সত্তা' বা প্রোফাইল তৈরি করে। এটি এক ধরনের ‘প্রদর্শনীমূলক পরিচয়’, যেখানে মানুষ সচেতনভাবে তার জীবনের ইতিবাচক দিকগুলো প্রদর্শন করে।


সমাজবিজ্ঞানী আরভিং গফম্যানের নাট্যশাস্ত্র তত্ত্ব অনুসারে, ব্যবহারকারীরা যেন এক মঞ্চে অভিনয় করে চলেছে, যেখানে তারা দর্শকদের জন্য নিজেদের সবচেয়ে ভালো দিকগুলো তুলে ধরে। এই প্রদর্শন সংস্কৃতি বাংলাদেশের শহুরে তরুণ সমাজের মধ্যে বিশেষভাবে প্রকট। সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের ‘সফল’, ‘নান্দনিক’ বা ‘ভ্রমণপিয়াসী’ হিসেবে তুলে ধরার প্রবণতা বাড়ছে, যা ব্যক্তিগত জীবনে তৈরি করছে এক ধরনের চাপ, যা নয়, তা দেখানোর চাপ। আত্মমর্যাদা এখন আর কেবল নিজস্ব অর্জন থেকে আসে না, বরং তা নির্ভর করে অন্যের ‘ভালো লাগা’ বা ‘অনুসরণ’ সংখ্যা থেকে।


এই ভার্চুয়াল প্রতিযোগিতার ফলস্বরূপ একদিকে যেমন মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মমর্যাদা এবং সামাজিক সম্পর্কের গুণগত পরিবর্তন আসছে, তেমনি অন্যদিকে সামাজিক মূল্যবোধের কেন্দ্রে চলে আসছে বাহ্যিক প্রদর্শন। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে দ্রুত ‘তারকা’ বা প্রভাবক (ইনফ্লুয়েন্সার) হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিচ্ছে, যেখানে খ্যাতি অর্জনের পথ হিসেবে অনেক সময়ই নৈতিক সীমা অতিক্রম করা হচ্ছে।


এই বিখণ্ডিত পরিচয় মানুষের একক নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে দেয়, কারণ নৈতিক বিচার তখন নির্ভর করে সেই ভার্চুয়াল গোষ্ঠীর ওপর, যার কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হবে। যখন ব্যক্তির ভার্চুয়াল জীবন ও বাস্তব জীবনের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়, তখন তৈরি হয় এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক শূন্যতা। বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যমে ছবি বা ভিডিওর মাধ্যমে আর্থিক সচ্ছলতা বা সুখী দাম্পত্যের কৃত্রিম প্রদর্শন অনেক সময়ই পরিবার এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কে অস্থিরতা ও অবিশ্বাস তৈরি করে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও