অর্থনীতি কতটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে

প্রথম আলো বিরূপাক্ষ পাল প্রকাশিত: ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭:২৩

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের সাফল্য নিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আত্মতুষ্টির এক চমকপ্রদ বাণী দিয়েছেন। অর্থনীতি নাকি ‘আইসিইউ থেকে কেবিনে গিয়ে এত দিনে বাড়ি ফিরে আসছে’। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন বিধায় তাঁর মতো একজন বিশেষজ্ঞের মন্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে মাপা উচিত। আওয়ামী আমলে তিনি একজন ‘পলিসি এক্সপার্ট’ হিসেবে অজস্র মন্তব্য রাখলেও তখন যে অর্থনীতি আইসিইউতে চলে গিয়েছিল, এ রকম কোনো বিশ্লেষণ প্রকাশ করেননি।


অর্থনীতি যে একটি সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছিল, সে কথা প্রায় সব অর্থনীতিবিদ বলতে শুরু করেন ২০২২ সাল থেকে। তখন কোভিড-উত্তর সময়ে অর্থনীতিতে কেবল নবজোয়ার শুরু হয়; কিন্তু জোগানের অপর্যাপ্ততা ও বিঘ্নতা এক আকস্মিক মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি করে। ঠিক তখনই রাশিয়াপতি ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণে তেলের জোগানেও বিঘ্ন ঘটে, যা মূল্যস্ফীতির আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়। বাংলাদেশেও শুরু হয় উচ্চ মূল্যস্ফীতির যুগ। ২০২১ সালের সাড়ে পাঁচ ভাগের মূল্যস্ফীতি ২০২২-এ প্রায় আট ভাগে উঠে যায়, যা ২০২৩-এ শতকরা ১০ ভাগ স্পর্শ করে।


এই বর্ধমান মূল্যস্ফীতির একাংশ বৈশ্বিক হলেও এর বৃহদংশ হাসিনা সরকার ভুল নীতির মাধ্যমে চাঙা করেছিল। ধনিকতুষ্টির ব্রতে জোর করে সুদহার কম রাখা এবং রাজস্ব অক্ষমতার কারণে গোপনে টাকা ছাপিয়ে উন্নয়ন ব্যয় মেটানোর কারণে মূল্যস্ফীতির অত্যাচার নবযৌবন লাভ করেছিল। এগুলোর বিরুদ্ধে অনেক অর্থনীতিবিদের পাশাপাশি বর্তমান অর্থ উপদেষ্টাও সোচ্চার ছিলেন; কিন্তু অর্থনীতি যে আইসিইউতে চলে গেছে সে রকম বলেননি। কখনো শুনিনি যে অর্থনীতি ‘গাজা’র মতো বিধ্বস্ত অবস্থায় শেষ হয়ে গেছে। শুনিনি এটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। 


দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি রোগ অর্থনীতির একটি কিডনি প্রায় নষ্ট করে দিয়েছিল; কিন্তু ওতেই পুরো শরীর নষ্ট হয়ে যায়নি। বাংলাদেশের প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা ২০২২ সালে তাদের ইতিহাসের কঠিনতম সংকটে পড়েছিল। একই অবস্থা পাকিস্তানের হয়েছিল ২০২৩ সালে; কিন্তু বাংলাদেশ পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার মতো আইসিইউতে যায়নি। অন্যদিকে পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কাও গাজা হয়ে যায়নি। অসুস্থ হওয়া আর মুমূর্ষু হওয়া এক কথা নয়। মুমূর্ষু হওয়া আর মরে যাওয়াও এক কথা নয়। 


আওয়ামী আমলের শেষ দুই বছর বিশ্বব্যাংক সরকারের রাজস্ব দুর্বলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইএমএফ ব্যাংক খাতে বর্ধমান খেলাপি নিয়ে সতর্কঘণ্টা বাজিয়েছে। হাসিনা সরকারের সুদহার বা বিনিময় হারের কোনোটি নিয়েই ওরা সন্তুষ্ট ছিল না। বৈশ্বিক রেটিং এজেন্সিগুলোও তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি ‘স্থির’ থেকে কমিয়ে ‘ঋণাত্মক’ করেছে; কিন্তু অর্থনীতি ‘ধ্বংসপ্রায়’ হয়ে গিয়েছিল, এমন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।


একটি অর্থনীতি ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় যাচ্ছে কি না, তার জন্য তিন ধরনের লক্ষণ থাকে ১. তীব্র খাদ্যসংকট বা দুর্ভিক্ষ; ২. তীব্র মূল্যস্ফীতি বা ‘হাইপারইনফ্লেশন’ ও ৩. আকস্মিকভাবে জেগে ওঠা অসহনীয় বেকারত্ব। এর বাইরে ঋণসংকটও এক জাতিকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে। কোনো দেশের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ভালো থাকলে দুর্ভিক্ষ অনেকটা সামাল দেওয়া যায়। কারণ, পৃথিবীর সব দেশে খাদ্যোৎপাদন একসঙ্গে কমে না। কোথাও না কোথাও উদ্বৃত্ত থাকবেই। অন্যদিকে তীব্র ঋণসংকটকে সাময়িকভাবে পাশ কাটানো যায় বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফের উদ্ধারকর্ম বা ‘বেল আউট’-এর মাধ্যমে। কোনো বড় দেশও পাশে দাঁড়াতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র একসময় জাপান ও মেক্সিকোকে এ রকম সহায়তা দিয়েছিল, যার মূলে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারগত স্বার্থ; কিন্তু সংকট প্রবল হয় উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব নিয়ে। সেখানে বহিঃশক্তি হাত দিতে পারে না। দোষটা দেশের ভেতরের। 


২০২৩ সালের মে মাসে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি ৩৮ শতাংশে উঠেছিল। সে বছর পাকিস্তান কোভিডের বছর ছাড়া এর আগের অর্ধশতকের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি তথা ঋণাত্মক শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছিল। শ্রীলঙ্কা ২০২২ সালে সর্বোচ্চ শতকরা ৫০ ভাগ মূল্যস্ফীতির আগুনে জর্জরিত হয়। কপালে জোটে বিগত ৫০ বছরের সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আওয়ামী লীগের শেষ সময়ে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ছিল শতকরা ১১ ভাগের মতো। প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ২ ভাগ। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও