জ্বালানি সংকটের সমাধান নির্ভর করছে ডলারের ওপর
দেশ রূপান্তর : দীর্ঘদিন ধরেই দেশে জ্বালানি নিয়ে যে সংকট চলছে তা এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। এই পরিস্থিতি থেকে সহসা মুক্তির কোনো উপায় দেখছেন?
ম. তামিম : এই মুহূর্তে একমাত্র উপায় হলো, বিদেশ থেকে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি করা। আর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য যে কয়লা দরকার সেটা যদি ঠিকমতো আমদানি করা যায়, তাহলে আপাতত পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু বাস্তবে এটা নির্ভর করবে সরকারের কাছে কী পরিমাণ ডলার আছে তার ওপর। এছাড়া তো তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান নেই।
দেশ রূপান্তর : জ্বালানি নিয়ে সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, বৈশ্বিক কারণে বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি। আসলে মূল কী কারণ রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
ম. তামিম : বৈশ্বিক কারণে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে কিছুটা প্রভাব তো পড়ছেই। বিশেষ করে, ২০২২-২০২৩ সালে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে বড় প্রভাব ছিল। এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে সরকার তখন এলএনজি আমদানি বন্ধই করে দিল। সুতরাং এই কারণে খুব বেশি যে ইফেক্ট (প্রভাব) পড়েছে তা বলার সুযোগ নেই। কয়েকটা চালান হয়তো আমরা বেশি দামে গ্যাস কিনেছি। কিন্তু গ্যাসের অভাবে আমাদের তো বিদ্যুতের লোডশেডিং করেই চলতে হয়েছে তখন। এখন বিশ্ববাজারে দাম কম হলেও ডলার সংকটের কারণে কিনতে পারছি না। আসলে আমদানিকৃত জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে ব্যয় বাড়বেই। এটা কমানোর কোনো সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে তো আমাদেরও বেশি দামে জ্বালানি কিনতে হবে। এখন আবার সেই পুরনো কথা বলতে হয়, জ্বালানি খাতে কেন আমরা এত বেশি আমদানিনির্ভর হয়ে পড়লাম? সরকার যখন এই সিদ্ধান্ত নেয় তখন বলা হয়েছিল, অর্থনীতি যদি ভালোভাবে রান করে তাহলে আমরা এই বাড়তি দাম সামাল দিতে পারব। কিন্তু অর্থনীতি তো সেভাবে আগায়নি। এখন সেই টাকা জোগান দেওয়ার কোনো উপায় নেই।
দেশ রূপান্তর : দেশীয় জ্বালানি অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে ওঠার সুযোগ কতটুকু রয়েছে?
ম. তামিম : এত স্বল্প সময়ে দেশীয় জ্বালানি অনুসন্ধান করে সেই গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব না। এজন্য অন্তত বছর তিনেক সময় দরকার। সরকার যদি এখন থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করে তাহলে ওই সময়ের মধ্যে একটা ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। পেট্রোবাংলা ৪৬টি কূপ খননের উদ্যোগ নিলেও গত দুই বছরে মাত্র ৯টি কূপ খনন করতে পেরেছে। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে বাকি কূপ কীভাবে খনন করবে?
দেশ রূপান্তর : চলমান ৪৬টি কূপ খননের পাশাপাশি ২০২৮ সালের মধ্যে আরও ১০০টি কূপ খননের কথা বলছে পেট্রোবাংলা। এগুলোর অবস্থা তাহলে কী হবে?
ম. তামিম : এসব কথা কোথা থেকে কীভাবে বলে তা আল্লাহই ভালো জানেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ১১১ থেকে ১১২টা কূপ খনন করা হয়েছে। আর আগামী ৫ বছরের মধ্যে তারা ১০০টি কূপ খনন করবে। এজন্য যে টাকা দরকার সেটা কোথায় পাবে? একেকটা কূপ যদি নিজেরাও খনন করি তাও তো ১০০ মিলিয়ন দরকার। বিদেশি কোম্পানি করলে ১৫০ মিলিয়ন লাগবে।
দেশ রূপান্তর : খাত সংশ্লিষ্টদের অনেকেই বলছেন, দেশীয় জ্বালানি অনুসন্ধানে সরকারের গাফলতি রয়েছে। আপনি কি এর সঙ্গে একমত?
ম. তামিম : অনুসন্ধানে অবহেলা বা গাফিলতি এটা তো রয়েছেই। পাশাপাশি বর্তমানে আমাদের দেশে বিভিন্ন গ্যাসকূপে যে পরিমাণ গ্যাস মজুদ রয়েছে তা পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারছি না বা করছি না। এতদিন পর এখন বলা হচ্ছে, আরও ১০০টি কূপ খনন করব। এটা তো ১৫-২০ বছর আগে হওয়ার কথা ছিল। সেটা কেন হয়নি? এখন যদি এই ১০০টি কূপ খনন করে সেখানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে গত ১৫ বছর পরে কেন হচ্ছে? ২০০৮-২০০৯ সালেই তো আমাদের দেশে গ্যাসের সংকট তৈরি হয়। এখনকার গ্যাসের যে সংকট সেটা তো আগে থেকে প্রেডিক্ট করা। পেট্রোবাংলার নিজস্ব প্রাক্কলনেই তখন এটা বলা হয়েছিল। তাহলে এই উদ্যোগ কেন এত দেরিতে নেওয়া হলো? তার মানে এখন এই উদ্যোগ যদি নেওয়া হয়, তাহলে তো আরও আগেই তখন এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ ছিল।