অগ্রাধিকার নির্ধারণে কেন এত ব্যর্থতা?
দুই-তিন দিন আগের কথা। যাচ্ছি প্রেস ক্লাবের লাইব্রেরিতে। শান্তিনগর বাজার-বটতলা রোড ধরে সেগুনবাগিচার ভেতর দিয়ে রিকশায় যাতায়াত। আগে ভাড়া দিতাম ৫০ টাকা। বাজার হয়তো মন্দা, এখন ৪০ টাকায়ও যাওয়া যায়। বটতলার দিকে এগোতেই দেখি বিরাট জটলা। লোকজন এক ব্যক্তিকে নিয়ে রাস্তার পাশে ব্যস্ত। মাথায় পানি ঢালছে, কেউবা বাতাস করছে। কী ব্যাপার? বুঝতে পারলাম ভাঙাচুরা রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। এতে তার শরীর ও মাথায় চোট লাগে। জ্ঞান আছে। তবে ভীষণ ব্যথায় তিনি অর্থাৎ পথচারী কাতরাচ্ছেন। বিষয়টা বুঝলাম মানুষের ‘গালাগাল’ শুনে। শান্তিনগর বাজার থেকে বটতলা পর্যন্ত রাস্তার অর্ধেক খানাখন্দে ভরা। এ অবস্থা চলছে বছর দেড়েক ধরে। খোঁড়াখুঁড়ি শেষে অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। রিকশা তো দূরের কথা, হেঁটে যাওয়াও সম্ভব নয়। রাস্তার যেটুকু কাটাকাটি করা হয়নি, তার অবস্থাও খুব খারাপ। স্বাভাবিকভাবে চলাচল করা সম্ভব নয়। সবাই বলাবলি করছে, প্রশ্ন করছে, কবে এ রাস্তা মেরামত হবে, কবে চলাচল হবে নির্বিঘ্ন। দোকানদারদের কেউ কেউ বললেন, প্রায়ই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। স্কুলযাত্রী ছেলেমেয়ে ও অভিভাবকরা আছেন পেরেশানিতে। কেউ জানে না এ রাস্তা পুরোপুরি মেরামত কবে হবে, কবে চলাচলযোগ্য হবে।
একই অবস্থা দেখেছি কিছুদিন আগে প্রেস ইনস্টিটিউটসংলগ্ন রাস্তায়, যে রাস্তা ধরে যেতে হয় ভিকারুননিসা স্কুলে অথবা বেইলি রোডে। ওয়ানওয়ে রোড। মাসের পর মাস রাস্তাটি ছিল মেরামতাধীন। কী কষ্ট মানুষের, পথচারীদের, গাড়িওয়ালাদের, রিকশাওয়ালাদের। নিয়মিত মানুষ সহ্য করছে এ অব্যবস্থাপনা। আর প্রশ্ন করছে, কেন এসব হচ্ছে? রাস্তা কাটা হচ্ছে। তারপর ফেলে রাখা হচ্ছে দিনের পর দিন। অথচ এসব ব্যস্ত রাস্তা। বহুদিন পর এ রাস্তাটুকু মেরামত করা হয়েছে।
এখন জানাই মগবাজার চৌরাস্তার অবস্থা। দিনের পর দিন ড্রেনের কাজ, কাটা রাস্তার অব্যবস্থা রয়ে যাচ্ছে। কত অসুবিধা পথচারীদের। শুধু এ কয়টি রাস্তা নয়, ঢাকা নগরীর অলিগলিসহ বড় রাস্তার বেহাল দশা অনেক দিন যাবৎ। মেরামতি কাজের কোনো লক্ষণ নেই। খবরের কাগজে প্রায়ই দেখা যায়, ব্রিজ তৈরির কাজ অর্ধেক অসমাপ্ত রয়ে গেছে অনেক জায়গায়। উপজেলা শহরগুলোর রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমার অবস্থা তথৈবচ। অনেক বড় বড় রাস্তার অবস্থাও তাই। কোথাও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ নেই, কোথাও মেরামতি কাজের কোনো উদ্যোগ নেই। এটা কি পরিকল্পনার অভাব, বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব? এটা কি উদ্যোগের অভাব, নাকি টাকা-পয়সার সংকট? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাওয়া বৃথা। কারণ এসব সমস্যা বহু পুরোনো। অনেক কথাবার্তা এর ওপর নিয়মিত হয়। অভিযোগ, এসবের ওপর লেখালেখির কোনো লোক নেই। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অতিরিক্ত খরচ, খামখেয়ালিপনাসহ যাবতীয় সমস্যা বহুল আলোচিত। বলা যায়, এসব এখন চর্বিতচর্বণ। তবে ঘটনা হচ্ছে, এর কোনো শেষ নেই। কারও কিছু যায় আসে না। সব গা-সহা হয়ে গেছে। অথচ তা হওয়ার কথা নয়। স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে এসেছি। ইতোমধ্যে বহু অভিজ্ঞতা আমাদের সঞ্চিত হয়েছে। তারপরও কেন এ অবস্থা হবে? কেন অগ্রাধিকার নির্ধারণে আমাদের এত অনীহা, এত ব্যর্থতা? কেন খরচের, সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান রক্ষায় আমরা আজও ব্যর্থ হচ্ছি? অনেক প্রশ্ন।