সংকট ও অনিশ্চয়তার পথে নতুন যাত্রা
বিশ্ব রাজনীতিতে একটি ঘটনাবহুল বছর ছিল ২০২৩। বিদায়ি বছরে বিশ্ব রাজনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। কোনো ঘটনা অতীতের ঘটনার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে, আবার অনেক নতুন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও ঘটেছে।
বিশ্ব রাজনীতির সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতি, পরিবেশ, সংস্কৃতি, নিরাপত্তা ও শান্তি সবকিছুই একসূত্রে গাঁথা। ফলে বিশ্ব পরিমণ্ডলে ২০২৩ সালে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোয় নানা বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। আবার বিশ্ব রাজনীতির যে চরিত্র, তাতে অনেক ঘটনাকে ব্যতিক্রমধর্মীও বলা যাবে না। মনে রাখতে হবে, ২০২৩-এর সঙ্গে ২০২২-এর একটি যোগসূত্র রয়েছে। একইভাবে ২০২২-এর সঙ্গে ২০২১-এর যোগসূত্র ছিল।
অন্যদিকে আমরা যদি বিশ্ব রাজনীতির ট্রাজেকটরি বা সময়কাল বিবেচনা করি, সেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্নায়ুযুদ্ধ, এরপর স্নায়ুযুদ্ধোত্তর কাল লক্ষ করা যায়। ২০০১ সালের নাইন-ইলেভেনের ঘটনার পর আরেকটি সময়কাল তৈরি হয়েছিল। আবার ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে শুরু হয় আরেকটি নতুন পরিস্থিতি। একই সঙ্গে গত এক দশকে বিভিন্ন দেশের নেতৃত্বে পরিবর্তনের কারণেও বিশ্ব রাজনীতির প্রকৃতি ও ধরনের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর বিশ্ব রাজনীতির একটি নতুন চিত্র দেখা গিয়েছিল।
নতুন অনেক অনুষঙ্গ, উপকরণ তৈরি হয়েছিল। যেমন সেসময়ে হঠাৎ করেই ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন এবং সেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে দুই দফা শীর্ষ বৈঠক হয়েছিল, যা অনেকের কাছেই ছিল অবিশ্বাস্য। দুই দফা বৈঠকেও এ দুদেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক আগের অবস্থায়ই ফিরে গেছে।
২০২৩ সালে প্রথমত যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব রাজনীতি অনেকটাই আবর্তিত হয়েছে, সেটি হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধের ধারাবাহিকতা আমরা লক্ষ করেছি। ইউক্রেন যুদ্ধে কোন পক্ষ বিজয়ী হবে কিংবা যুদ্ধের ফলাফল কার দিকে যাবে অথবা যুদ্ধটি কীভাবে সমাপ্ত হবে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। আমরা লক্ষ করেছি, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে দুটি প্রধান পক্ষ, একদিকে রাশিয়া অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে ২০২৩ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে দুই ধরনের ধারণা ছিল। একটি ছিল রাশিয়া হয়তো ২০২৩ সালের শীতকালীন আক্রমণের মাধ্যমে ইউক্রেনকে পর্যুদস্ত করবে এবং যুদ্ধের ফলাফল দ্রুত রাশিয়ার পক্ষে নিয়ে আসবে। কিন্তু রাশিয়া সেই কাজটি করতে পারিনি। ইউক্রেন পশ্চিমা বিশ্বের সহায়তা নিয়ে সেই শীতের সময়টি অতিক্রম করেছে এবং রাশিয়ার ওপর পালটা আক্রমণ করেছে।
ইউক্রেন পশ্চিমা বিশ্ব থেকে অনেক উন্নতমানের অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করেছে। অত্যাধুনিক ‘লিওপার্ড’ ট্যাংক তারা পেয়েছে। ফলে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে অস্ত্র এবং আরও বেশি সহায়তা নিয়ে ইউক্রেন একটি পালটা হামলার চেষ্টা করেছে। এ পালটা আক্রমণের ব্যাপারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অনেক আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। পশ্চিমা বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন যে, ইউক্রেন যুদ্ধ একটি নতুন বাস্তবতা তৈরি করবে। কিন্তু সেটি শেষ পর্যন্ত তারা করতে পারেনি। তারা পালটা আক্রমণে যে ধরনের সামরিক বিজয়ের কথা ভেবেছিল সেটি ঘটেনি। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে একধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ার মধ্য দিয়েই ২০২৩ সালের সমাপ্তি ঘটেছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিশ্ব রাজনীতি
- ফিরে দেখা