মামলা-কারাদণ্ড ও সুষ্ঠু নির্বাচনের রূপকথা
২৮ অক্টোবরের পর বিএনপির নেতাকর্মীর ওপর গুপ্ত ও প্রকাশ্য হামলা-মামলা, নিপীড়নের সংবাদ আমরা নিয়মিত জানতে পাই। সমকালের গতকাল প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, ঢাকার মহাসমাবেশ (২৮ অক্টোবর) থেকে শুরু করে শনিবার (২৫ নভেম্বর, ২৩) পর্যন্ত সারাদেশে ৪০৭ মামলায় ১৬ হাজারের বেশি নেতাকর্মী আটক, সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলায় সাড়ে চার হাজারের বেশি নেতাকর্মী আহত। এ সময়ে একজন সাংবাদিকসহ ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ২৮ জুলাই থেকে সারাদেশে ৮০০-এর বেশি মামলায় ৬৯ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৮ হাজারের বেশি। রাজধানীসহ দেশের নানা এলাকায় বিএনপির সক্রিয় নেতাকর্মীর বাড়িতে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গুপ্ত হামলার সংবাদও প্রকাশিত হচ্ছে। সমকালে ১৯ নভেম্বর প্রকাশিত ‘গুপ্ত হামলার পেছনে কারা’ সংবাদে বলা হচ্ছে, ‘গত এক মাসে রাজশাহী ও নাটোরে অন্তত ১৩টি গুপ্ত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন দু’জন। প্রায় প্রতিটি ঘটনায় হামলাকারীরা হেলমেট অথবা মুখোশ পরে মাইক্রোবাস বা মোটরসাইকেলে এসে হামলা করে চলে যায়।’ নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, ‘সরকারের ইন্ধনে চোরাগোপ্তা হামলা হচ্ছে। তাই পুলিশ কাউকে ধরছে না।’ তিনি বলেন, ‘কার কাছে মামলা করব?’
মাঠ পর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীর ওপর যখন গুপ্ত ও প্রকাশ্য হামলার জোয়ার– কেন্দ্রীয় পর্যায়ে পরিস্থিতি আরও নাজুক। সক্রিয় নেতাকর্মী ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা বেশি দণ্ডিত। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন অসুস্থ, কারাবন্দি থেকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, দেড় দশক ধরে তিনি যুক্তরাজ্যে। মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ ২০ জন কেন্দ্রীয় নেতা এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রথম আলোর ২৪ নভেম্বর সংবাদ বলছে, ‘সারাদেশে জেলা ও মহানগরে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ দুই পদের [সভাপতি/আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব] নেতার সংখ্যা ৬ শতাধিক। বিএনপি ও এর তিন সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পদে থাকা ৮৫ জন নেতা এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ৩৮৬ জন আত্মগোপনে।’ বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলার সাজায় আচমকা তীব্রগতির খবরও মেলে। জানা যায়, গায়েবি মামলায় মৃত ও গুম হওয়া ব্যক্তিরও সাজা দিয়ে বসেছেন আদালত। সব মিলিয়ে বিএনপির প্রতি সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি রুদ্ধশ্বাস যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, নিঃসন্দেহে বলা যায়।