আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন পিছিয়ে
উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর র্যাংকিং একটি আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া। যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন ২০২৪ সালের জন্য বিশ্বের সেরা যে ৮০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা করেছে, তাতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তানের যথাক্রমে ২৪ ও আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আছে। গত বছরের টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৬০১ থেকে ৮০০-এর মধ্যে। এবার ৮০১ থেকে এক হাজার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আছে। এগুলো হলো ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। ১০০১ থেকে ১ হাজার ২০০-এর মধ্যে আছে তিনটি—বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এর পরের ১ হাজার ২০১ থেকে ১ হাজার ৫০০-এর মধ্যে তালিকায় স্থান পেয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছর একই সংস্থার জরিপে এশিয়ার সেরা ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছিল না। ওই তালিকার ১৮৬তম অবস্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯২তম অবস্থানে ছিল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। র্যাংকিংয়ে এশিয়ার সেরা দশের মধ্যে চীনের চারটি, হংকংয়ের তিনটি, সিঙ্গাপুরের দুটি ও জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এবারের র্যাংকিংয়ে শীর্ষে আছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় স্থানে স্ট্যানফোর্ড ও তৃতীয় স্থানে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। এর পরই হার্ভার্ড, কেমব্রিজ, প্রিন্সটন, ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ইম্পেরিয়াল কলেজ, লন্ডন, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে, ইয়েল ইউনিভার্সিটি।
প্রতি বছরই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের জরিপে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তালিকার তলানিতে থাকে। এ তথ্যগুলো লজ্জা ও অস্বস্তির কারণ হলেও শিক্ষার যারা অভিভাবক, তারা এতে ভাবিত হন বলে মনে হয় না। একসময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ছিল বিশ্বজুড়ে। সেই সুনাম ধরে রাখতে না পারার কারণ কি সেরা শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে পারছি না? আগে সেরা শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য গেলেও ফিরে আসতেন। এখন তাদের বড় অংশই আর ফিরে আসছেন না। যারা আসছেন, তাদের অনেকেই নানা কারণে দেশে থাকতে পারছেন না। ফিরে আসা মেধাবীদের যথাযোগ্য স্থানে বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সহজে নিয়োগ পান না। বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে পাঠদান, মৌলিক গবেষণা, জ্ঞান বিতরণ পদ্ধতি, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গিসহ অনেক প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করা হয়। শিক্ষার মান, গবেষণা পরিবেশ, গবেষণা শ্রেষ্ঠত্ব, ইন্ডাস্ট্রি সংযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক সম্ভাবনা—এ গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি ক্ষেত্রে টাইমস হায়ার এডুকেশন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং করে থাকে। নির্মম সত্য হলো, পাঠদান ছাড়া অন্য বিষয়গুলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার অভিভাবকরা বারবার উপেক্ষা করে চলেছেন। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা ও জ্ঞান সৃষ্টিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে, বাংলাদেশ এ দুই ক্ষেত্রেই সবচেয়ে কম নজর দেয়। মৌলিক গবেষণা ও উদ্ভাবনে ১ শতাংশেরও কম বরাদ্দ রেখে শিক্ষার মান ধরে রাখা অলীক কল্পনার মতোই।