‘বিশ্বকে বাংলাদেশের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানান দিতে চেয়েছিলাম’
আজ ঐতিহাসিক ২৯ জুলাই। জাতীয় ডাকটিকিট দিবস। ৫২ বছর আগে ১৯৭১ সালের আজকের দিনেই অবমুক্ত করা হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিট। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রকাশিত ডাকটিকিটের সংখ্যা ছিলো ৮টি। ডাকটিকিটগুলোর নকশা করেছিলেন লন্ডন প্রবাসী বাঙালি শিল্পী বিমানচাঁদ মল্লিক।
মুক্তিযুদ্ধ চলকালে ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই ব্রিটিশ হাউস অব কমনসে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী উপস্থিত সাংবাদিক ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে ডাকটিকিটগুলো প্রথম প্রদর্শন করেন। এরপর ২৯ জুলাই মুজিবনগর, বিভিন্ন মুক্তাঞ্চল, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ মিশন ও লন্ডন থেকে একযোগে এই ডাকটিকিটগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। বিমানচাঁদ মল্লিকের নকশায় ছাপানো ডাকটিকিটগুলো মুক্তিযুদ্ধকালীন দেশের বিভিন্ন মুক্তাঞ্চল থেকে পাঠানো বিভিন্ন চিঠি, রসদ ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে ব্যবহৃত হতো। এই ডাকটিকিটগুলোই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে পরিচিত করার বড় মাধ্যম। আর এই ডাকটিকিটের নকশার জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেননি বিমানচাঁদ মল্লিক।
সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিল্পী বিমানচাঁদ মল্লিক কথা বলেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিটের পূর্বাপর নিয়ে।
ডেইলি স্টার: বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিট নকশার দায়িত্বটি আপনাকে কে, কখন দিলেন?
বিমানচাঁদ মল্লিক: দিনটি ছিল একাত্তরের ২৯ এপ্রিল। আমি তখন ওখানে একটি কলেজে পড়াই। কলেজের ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরে আসার পর আমার স্ত্রী জানালেন জন স্টোনহাউস আমাকে ফোন করেছিলেন। স্টোনহাউস তখন লেবার পার্টির এমপি। ১৯৬৯ সালে আমি যখন মহাত্মা গান্ধীর জন্মশতবার্ষিকীর ডাকটিকিটের ডিজাইন করেছিলাম তখন জন স্টোনহাউজ পোস্টমাস্টার জেনারেল ছিলেন।
বাসায় ফেরার কিছুক্ষণ পর স্টোনহাউসের ফোন পেলাম। ফোনে তিনি বললেন, 'তুমি নিশ্চয়ই পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছ। সেখানে কী নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও পাশবিকতা চলছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখন ডাকটিকিট বের করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তুমি কি ডাকটিকিটগুলোর নকশা করে দিতে পারবে?' আমি তাকে জানালাম, 'নিশ্চয়ই। আমি যদি ডাকটিকিটের নকশার কাজটি করতে পারি তাহলে আমি তৃপ্তি পাব।' কারণ তখন আমি সংবাদপত্র, রেডিও ও টেলিভিশন থেকে নিয়মিতই জানতে পারছি যে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি মিলিটারি কী ধরনের তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে। তখন আমার মনে হয়েছিল একজন নিতান্ত সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি কীভাবে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি। যখন আমি ডাকটিকিটের নকশাগুলো করার দায়িত্ব পেলাম আমার মনে হলো এটি একটি বড় সুযোগ।
ডেইলি স্টার: আপনাকে কি নকশার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল?
বিমানচাঁদ মল্লিক: না নির্দিষ্ট কোনো সময় বেধে দেওয়া হয়নি। আমাকে আমার মতো কাজ করতে দেওয়া হয়েছিল। তবে আমি জানতাম বেশি দেরি করা যাবে না।
ডেইলি স্টার: ডিজাইন কেমন হবে সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দেওয়া হয়েছিল আপনাকে?
বিমানচাঁদ মল্লিক: না আমাকে কোন ধারণা দেওয়া হয়নি। বরং বলা হয়েছিল, 'তুমি কীভাবে করবে তুমি জানো।' যদিও আমি তখন বাংলাদেশের অবস্থাটা জানতাম। ফলে আমাকে কিছু না বলা হলেও আমার একটা ধারণা ছিল। তাই আমি সিদ্ধান্ত নেই যে তখনকার পরিস্থিতিই আমি বিশ্বের কাছে তুলে ধরব।
ডেইলি স্টার: আপনি যখন ডিজাইন করছিলেন তখন কি স্টোনহাউসের সঙ্গে আপনার কোনো বৈঠক কিংবা সাক্ষাৎ হয়েছে?
বিমানচাঁদ মল্লিক: টেলিফোনে প্রাথমিক কথোপকথনের পর স্টোনহাউসের সঙ্গে আমার দেখা হয় মে মাসের ৩, ৬, ১০ ও ১২ তারিখ।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ডাকটিকিট
- স্বাধীন বাংলাদেশ
- নকশা