অদম্য এক জননী
গতকাল ছিল শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৪ সালের এই দিনে প্রায় আড়াই দশক ঘাতক ব্যাধি ক্যান্সারে ভুগে যুক্তরাষ্ট্রের এক হাসপাতালে মারা যান তিনি। আজন্ম যোদ্ধা এ মহীয়সী নারীকে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
১৯৭০-এর দশকের শুরুতে তাঁর মুখে যখন ক্যান্সার ধরা পড়ে, তখন এর চিকিৎসা ছিল না বললেই চলে। প্রায় সর্বক্ষেত্রেই আক্রান্ত মানুষটিকে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হতো। কিন্তু জাহানারা ইমামের ছিল অদম্য এক মন। ফলে ক্যান্সার নিয়েই অসাধারণ এক কাজ করে গেছেন তিনি।
১৯৯১ সালে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম জামায়াতে ইসলামীর আমির ঘোষিত হলে দেশে ছাইচাপা আগুনের মতো জনবিক্ষোভ তৈরি হয়। আরও কয়েকজনসহ জাহানারা ইমাম তা বুঝতে পেরে গঠন করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। ক্যান্সারের কারণে কথা বলতে সমস্যা হতো তাঁর। এর পরও সবার অনুরোধে ওই কমিটির আহ্বায়ক হন তিনি। আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে আওয়ামী লীগ, বাম ধারার প্রায় সব দলকে যুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠিত হলে তারও আহ্বায়ক হন তিনি। বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক প্রশ্নে পরস্পরবিরোধী মত পোষণকারী এসব দলকে এক ছাতার নিচে রাখার শারীরিক-মানসিক পরিশ্রমও করতে হয়েছে জাহানার ইমামকে। বলতে গেলে প্রায় একক হাতে। প্রচণ্ড শারীরিক ধকল সয়ে দেশের আনাচে-কানাচে সভা-সমাবেশও করেন তিনি। তাঁর নাম হয় শহীদ জননী।