ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও রমজান সামনে রেখে অসাধু সিন্ডিকেটের কারসাজিতে অস্থির হয়ে উঠেছে বাজার। দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রায় প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। অর্থনৈতিক সংকটের এ সময়ে বাজারে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সক্রিয় হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ধর্মীয় কোনো উৎসব-অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে পণ্যসামগ্রীর দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমানো হয়; যেমন মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ এরই মধ্যে রমজান উপলক্ষ্যে নিত্যপণ্যের মূল্যহ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে। দুঃখজনক হলো, আমাদের দেশে এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। এখানে রমজানকে পুঁজি করে বাড়তি মুনাফা পকেটস্থ করার দুরভিসন্ধিতে ভোক্তাসাধারণকে জিম্মি করা হয়, যা অনৈতিক ও অগ্রহণযোগ্য।
বাড়তি দামে পণ্য কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় বেড়েছে এবং আয়ের বেশির ভাগ অর্থ খাদ্যপণ্য কেনায় ব্যয় করতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রয়ক্ষমতা না বাড়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন-আয়ের মানুষ অসহায়বোধ করছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের শক্ত কোনো ভূমিকা নেই-এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নানা অপকৌশলে ভোক্তাদের ঠকানো ছাড়াও কারসাজি ও যোগসাজশের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া অনৈতিক তো বটেই, একই সঙ্গে অপরাধও। অতীতেও নানা উপলক্ষ্যে প্রায়ই নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। এবারও রমজান সামনে রেখে বাজারে একই ধরনের অপতৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে, যা শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
ব্যবসায় মুনাফা অর্জন স্বতঃসিদ্ধ ও স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবে মুনাফা অর্জনের নামে নীতিজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়। ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের দুর্দশা লাঘবে আন্তরিক হলে বছরের অধিকাংশ সময় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। রোজার আগে বাজারে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি, খেজুরসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা এটাই প্রমাণ করে-দেশের ব্যবসায়ীরা জনস্বার্থকে মোটেই গুরুত্ব দেন না। তাদের এহেন আচরণ ও কর্মকাণ্ড অযৌক্তিক ও অমানবিক বলে মনে করি আমরা। লোক ঠকানোর মানসিকতা পরিহার করে আসন্ন রমজানে সব ধরনের পণ্য ও সেবার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ী সমাজ আন্তরিক হবে, এটাই প্রত্যাশা।