জীববৈচিত্র্যবান্ধব আশঙ্কামুক্ত কৃষি পদ্ধতিই আধুনিক কৃষি

বণিক বার্তা ড. মো. নাজিম উদ্দিন প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:২৫

বাংলাদেশ কয়েক দশকে সবুজ বিপ্লবের কিছু যুগান্তকারী উদ্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ফসল উৎপাদনে ঈর্ষণীয় সফলতা পেয়েছে, তার দৃশ্যমান ফলাফল হলো প্রধান কিছু ফসল (ধান, আলু, সবজি, আম ইত্যাদি) উৎপাদনে বৈশ্বিক র‍্যাংকিংয়ে প্রথম দশে থাকা। সাফল্যের প্রতিদান হলো, বৃহৎ আকারের একক ফসলের কিছু বাছাই করা জাতের ওপর নির্ভরশীলতা এবং এ জাতগুলোর উচ্চফলনশীলতা বজায় রাখার জন্য রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগ, তদুপরি একক ফসল নিশ্চিত করার জন্য ভেষজনাশক বা আগাছানাশকের নির্বিচার প্রয়োগ। তাই দেশের সাফল্য কখনো কখনো ম্লান হয়ে যায়, যখন উৎপাদন ব্যবস্থার নেতিবাচক দিকগুলো মারাত্মকভাবে সামনে চলে আসে। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যে শুধু বাংলাদেশে দৃশ্যমান তা নয়, সারা বিশ্বই এ ব্যবস্থার শিকার, তবে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশগুলোতেও এ ব্যাপকতা একটু বেশি।


সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান সবজি বেগুন ও তার জমিতে ভারী ধাতুর ক্ষতিকর উপস্থিতির বৈজ্ঞানিক প্রমাণে বর্তমান ব্যবস্থার ভয়াবহতা আরেকবার প্রকাশ পেয়েছে। শুধু কি ভারী ধাতু, মাটির উপরে ও নিচের পানির নাইট্রেটের ঘনত্ব বেড়ে গেছে, যা দেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণা ফলাফলে তুলে ধরা হয়েছে। কৃষিজমিতে ভারী ধাতুর প্রধানতম কারণ অযাচিত পরিমাণে ফসফেট (ভারী ধাতু ক্যাডমিয়াম-সমৃদ্ধ রক ফসফেটের কাঁচামাল) সার ও বালাইনাশক (লেড, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক, নিকেল ইত্যাদি) প্রয়োগ এবং নাইট্রোজেন সারের অপরিণাম ব্যবহারের ফলে মাটির উপরে ও নিচের পানিতে নাইট্রেটের উপস্থিতি। মাটিতে বা ফসলে প্রয়োগ করার কোনো রাসায়নিক সারই ৩০ ভাগের বেশি ব্যবহার হয় না। বাকি অংশ মাটিতে সংবন্ধন, সেচের পানি বা বৃষ্টির পানির মাধ্যমে জলাধারে জমা হয়ে জলজ প্রাণীর ক্ষতিসহ পরিবেশেরও সীমাহীন ক্ষতির কারণ হয়। এছাড়া নাইট্রোজেন সার বেশি দিলে গাছের ভারী ধাতু শোষণ মাত্রা বেড়ে যায়।


মানবদেহে ক্যাডমিয়াম ও নিকেলের উপস্থিতিতে কম ওজনের সন্তান প্রসব, হাড়ভঙ্গুরতার মতো রোগ দেখা যায়। নাইট্রেট-সমৃদ্ধ পানি পান করলে মেথামোগ্লোবিনিমিয়া হতে পারে, অন্ত্রে নাইট্রেটের রূপান্তর যৌগ ক্যান্সারের কারণ। এছাড়া কীটনাশক হিসেবে বিভিন্ন কার্বামেট, পাইরেথ্রয়েড এবং নিওনিকোটিনাইডের এন্ডোক্রাইনের কার্যকলাপ ব্যাহত করে এবং প্রাণী ও মানুষের প্রজননের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের প্রমাণ আছে। আবার কীটনাশক ক্লোরপাইরিফস, ফসফামিডন, ম্যালাথিয়ন, ফেন্থিয়ন, মিথাইল ফসফরোথিওয়েট, প্যারাথিয়ন, ক্লোরফ্লুজাউরন, সাইপারমেথ্রিন বা ফক্সিমিন জমিতে প্রস্তাবিত ঘনত্বে মাটি এবং রাইজোস্ফিয়ার মাইক্রোবায়োটার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে আসছে। ভেষজনাশক গ্লাইফোসেট মাটির রোগসৃষ্টিকারী অণুজীবের তুলনায় অনেক কম ঘনত্বে মাটি, উদ্ভিদ এবং অন্ত্রের উপকারী জীবাণুকে বাধা দেয়। সামগ্রিকভাবে, মাটি, উদ্ভিদ এবং মানব জীবাণুর ওপর গ্লাইফোসেটের এ পরোক্ষ প্রভাবগুলো মানুষের স্বাস্থ্যকে অস্বাভাবিকভাবে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ বর্তমান উৎপাদন ব্যবস্থা কোনো অবস্থাতেই ইতিবাচক নয় বরং বিষময়। যেভাবে চলছে তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ সবুজ বিপ্লবের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারের মাত্রা বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় আছে; গত ১০ বছরে রাসায়নিক সার ব্যবহার প্রতি হেক্টরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, বালাইনাশকের ব্যবহারও বেড়েছে বিশেষ করে ভেষজনাশক।


সমীক্ষায় দেখা গেছে, এশিয়ায় পৃথিবীর সর্বাধিক পরিমাণ হেক্টরপ্রতি ২৫ কেজি বালাইনাশক ব্যবহার হচ্ছে। চীন ও ভারত সেখানে শীর্ষস্থানে, বাংলাদেশও প্রায় ১০ কেজি ব্যবহার করছে। নীতিনির্ধারণী মহলও বর্তমান খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতি নিয়ে উদ্বিগ্ন, প্রতিকার হিসেবে জাতীয় কৃষিনীতি ২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে যার মূল লক্ষ্য হলো নিরাপদ, লাভজনক কৃষি এবং টেকসই খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা অর্জন। অর্থাৎ বর্তমান কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থা নিরাপদ নয়, তা নতুন নীতির মূল লক্ষ্যেই উল্লেখ আছে। ফলে এ বিষময় ব্যবস্থায় মানুষ, মাটি, পরিবেশ, প্রতিবেশের স্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে, এমন বাস্তবতায় একটি বিষমুক্ত আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা সবার প্রত্যাশা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও