কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

নিমজ্জিত হিমশৈলীর দৃশ্যমান চূড়া

সমকাল সম্পাদকীয় প্রকাশিত: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:৫৮

ইষ্টক-কাষ্ঠে নির্মিত শহর কিংবা নগরের অনেক গৃহাভ্যন্তরে গৃহপরিচারিকাগণ কী দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করেন, কদাচ সংবাদমাধ্যমের উপজীব্য হইলেই উহার খণ্ডচিত্র পাইয়া থাকি। যেরূপ পাইয়াছি কুমিল্লা শহরতলির ধর্মপুর হইতে। উদাহরণস্বরূপ অঙ্গজুড়িয়া খুন্তির ছ্যাঁকা, নির্দয় প্রহারের প্রাচীন ও অর্ধ-প্রাচীন চিহ্ন এবং সর্বসাম্প্রতিক ঝলসানো নিম্নাংশ লইয়া শিশু সুমাইয়া তাহার গৃহকর্ত্রীর ভবনের দ্বিতীয় তলা হইতে লাফাইয়া পড়িবার পরই আমরা ঘটনাটি অবগত হইলাম। গৃহকোণে ধুঁকিয়া ধুঁকিয়া মৃত্যুকে আহ্বানের পরিবর্তে জীবন হাতে করিয়া ঝাঁপ দিয়াছিল বলিয়াই না আমরা জ্ঞাত হইলাম অবসরপ্রাপ্ত একজন অধ্যক্ষের পরিবারে তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত সদস্যগণ কতটা অমানুষ হইতে পারেন! মধ্যযুগে দাসগণের সহিত যেরূপ ব্যবহার করা হইত, বর্তমানেও কদাচ নিষ্ঠুরতা অতীতকে অতিক্রম করিয়া যায়। আমাদের স্মরণে রহিয়াছে, ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেও ঢাকার অভিজাত বনানী এলাকায় গৃহকর্মী তানিয়া বেগমের প্রায় অভিন্ন চিত্র আমাদের সম্মুখে অকস্মাৎ উন্মোচিত হইয়াছিল। প্রহারের বাহুল্য ও আহারের অপর্যাপ্ততা তো ছিলই; উক্ত গৃহকর্মী উদ্ধার হইয়াছিলেন মুখে স্কচটেপ ও হস্তে সুপার গ্লু লাগানো অবস্থায়। অমানবিকতা কতটা তলানিতে পৌঁছাইলে এইরূপ ঘটিতে পারে? ইহাও স্মরণে রাখিতে হইবে- সুমাইয়া কিংবা তানিয়া গৃহকর্মী নির্যাতনের নিমজ্জিত হিমশৈলীর দৃশ্যমান চূড়া মাত্র।


গত বৎসর আগস্টেই আমরা দেখিয়াছি, চাকচিক্যময় এই মহানগরীরতে একেকজন গৃহকর্মীর বিবর্ণ প্রাণটুকুও কীভাবে ঝরা পত্রের ন্যায় পড়িয়া যায়। অভিজাত বনানী এলাকাতেই 'অস্বাভাবিক মৃত্যু' লইয়া পৃথিবী ছাড়িয়া চলিয়া যাওয়া রেখা বেগমের ভাগ্যে পৈতৃক পরিচয়টুকুও জোটে নাই। মাত্র ২০ বৎসরের জীবনে দুই দফায় এক যুগের বেশি কাজ করিয়াছে যেই গৃহে, সেই গৃহকর্ত্রীর নিকট হইতে পুলিশ রেখার পৈতৃক পরিচয়টুকুও উদ্ধার করিতে পারিতেছিল না। সড়কে যেরূপ বেওয়ারিশ কুকুর কিংবা বিড়াল গাড়িচাপা পড়িয়া মরিয়া থাকে; যাহাদের নিদেনপক্ষে টম কিংবা মিনি নামটুকুও থাকে না; গৃহকর্মী রেখা বেগম যেন তাহাদের চাইতেও তুচ্ছ প্রতিভাত হইয়াছিল গৃহকর্তার নিকট। শেষ পর্যন্ত পুলিশই তদন্ত করিয়া হিমাগার হইতে লাশ প্রেরণ করিয়াছিল বরগুনার আমতলীতে স্বজনদের নিকট। আমরা প্রত্যক্ষ করি কিংবা নাই করি- প্রত্যন্ত গ্রামের অভাবক্লিষ্ট পরিবারের শিশু-কিশোরী সামান্য ক্ষুন্নিবৃত্তির নিমিত্তে এই নগরীর ইষ্টকসারির নিচে এভাবেই চাপা পড়িয়া থাকে। প্রশ্ন জাগে- গৃহকর্মীদের জন্য মর্যাদা ও মানবিকতা কতদূর?


ইহাও বহুল আলোচিত- শিশু কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক গৃহকর্মীগণ গৃহকর্তা বা কর্ত্রীর কী বিচিত্র বীভৎসতার শিকার হইয়া থাকে! উদয়াস্ত নহে; প্রত্যুষের আলো পরিস্ম্ফুট হইবার পূর্ব হইতে মধ্যরাত্রি অবধি তাহারা নিভৃত গৃহকোণে নীরবে কর্ম করিতে থাকে। বিনিময়ে উপযুক্ত মজুরি দূরে থাকুক; মনুষ্য হিসাবে প্রাপ্য মর্যাদাও সকল সময় জোটে না। সমাজের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারে গৃহকর্মীর উপর অচিন্তনীয় নিগ্রহের যে চিত্র প্রায়শ আমরা প্রত্যক্ষ করি, উহা নিছক খণ্ডচিত্র মাত্র। এই ক্ষেত্রে গৃহকর্তাদের পরিচয় আমাদের অবাক করে বৈকি। ভুলিয়া যাওয়া কঠিন, কয়েক বৎসর পূর্বে আমাদের জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটারের গৃহেও কীভাবে গৃহকর্মী নির্যাতিত হইয়াছিলেন। নাগরিকের মর্যাদা ও অধিকারের প্রশ্নে 'সোচ্চার' পেশাজীবীগণের গৃহ হইতেও গৃহকর্মী নির্যাতনের পূতিগন্ধ বাহির হইতে দেখিয়াছি আমরা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও