আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির জন্য শুভ কামনা
আওয়ামী লীগ শুধু বাংলাদেশ নয়, এই উপমহাদেশের প্রাচীনতম একটি রাজনৈতিক দল। ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও অর্জনে অনন্য গণমানুষের এক সংগঠনের নাম আওয়ামী লীগ। বাঙালির যা কিছু অর্জন তার সব কিছুর সঙ্গেই রয়েছে আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধ থেকে পদ্মা সেতু, স্যাটেলাইট-সাবমেরিন-মেট্রো রেল-পরমাণু যুগের সূচনা থেকে নদীর তলদেশে টানেল এবং অর্থনৈতিক উত্থানের বিস্ময় থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন—সব কিছুতেই আওয়ামী লীগ।
৭৩ বছরের ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ পথচলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির অন্যতম মূলমন্ত্র ছিল অতল দেশপ্রেম ও শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। গত ২৪ ডিসেম্বর দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি। নতুন-পুরনোর সমন্বয়ে হয়েছে এবারের কমিটি। বঙ্গবন্ধুকন্যা দশমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হয়েছেন। নেতাকর্মীরা এখনো বঙ্গবন্ধুকন্যার বিকল্প কাউকে ভাবতে পারছেন না। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যার চেয়ে যোগ্য এই মুহৃর্তে আর কেউ নেই—এ কথা আওয়ামী লীগের ঘোর শত্রুরাও স্বীকার করবেন।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মদাতা, বাংলা ও বাঙালির প্রতি চিরবিশ্বস্ত রাজনীতিক, বাঙালির চিরায়ত স্বপ্নের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সারথি বঙ্গবন্ধু যেমন বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববন্ধু হয়েছিলেন, তেমনি বঙ্গবন্ধুকন্যার বিস্ময়কর নেতৃত্ব তাঁকে বৈশ্বিক নেতৃত্বের কাতারে ঠাঁই করে দিয়েছে। দরদি রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ঋভু সম্মানে নন্দিত হওয়া ছাড়াও আরো বেশ কিছু কারণে বঙ্গবন্ধুর আত্মজা অনন্যা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ব্যাপ্তি পেরিয়ে এসব খুব একটা আলোচনায় আসে না। উদাহরণস্বরূপ, আইনের শাসন, বিচারপ্রক্রিয়া এবং মানবাধিকারের প্রতি শেখ হাসিনার দৃঢ় অঙ্গীকার পিতার কাছ থেকে মূল্যবোধের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এক অমূল্য সম্পদ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। চাইলে শেখ হাসিনা পিতা হত্যার ‘প্রতিশোধ’ নিতে পারতেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা বেঁচে যাওয়া দুই কন্যাকে হত্যা করতে মরিয়া। খুনিদের নিবৃত্ত করতে বঙ্গবন্ধুকন্যা চাইলে তাদের ‘ক্রসফায়ারে’ দিতে পারতেন। জিয়া যেভাবে ‘ক্যাঙারু আদালতে’, সংক্ষিপ্ততম সময়ে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিলেন, চাইলে শেখ হাসিনাও তেমন কোনো দ্রুত আদালতে বিচার করে দ্রুততম সময়ে খুনিদের ফাঁসিতে লটকাতে পারতেন। তিনি তার কিছুই করেননি।
আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের অধিকারের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রথমে সংবিধান থেকে ইনডেমনিটি নামের সভ্যতাবিরোধী কালো আইন বাতিল করেন। বিচারের আইনি বাধা অপসারণের পরই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা রুজু হয় এবং তদন্ত ও বিচার কাজ শুরু হয়। সব কিছু হয়েছে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়, স্বাভাবিক আদালতে, স্বাভাবিক সময়ে। এমনকি পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকেও শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শেষ করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্রুত বিচারের জন্য কোনো হস্তক্ষেপ নেননি। মামলার রায় কার্যকর করতে শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় আসতে হয়েছে। কারণ বিএনপি ক্ষমতায় এসে আপিল বিভাগে জাতির পিতা হত্যার বিচারের শুনানি কৌশল করে বন্ধ করে দেয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরতে না পারলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের হয়তো এখনো বিচার সম্পন্নই হতো না কিংবা রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হতো। সব সুযোগ থাকার পরও শেখ হাসিনা পিতা হত্যার ‘প্রতিশোধ’ নেননি, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জাতির জনকের হত্যার বিচার সম্পন্ন করেছেন। জেলখানার অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার করেছেন। গোটা বিশ্বকে দেখিয়েছেন প্রতিশোধ আর বিচারের পার্থক্য। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ভুলে বিচারপ্রক্রিয়ায় আস্থা রাখার এমন উদাহরণ বিরল। এ জন্যই বঙ্গবন্ধুর আত্মজা অন্যদের থেকে ভিন্ন, অনন্যা। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রেও অপরাধীরা আইনের সর্বোচ্চ সুরক্ষা পেয়েছে। রায়, আপিল, রিভিউ, রাষ্ট্রপতির কাছে মার্জনার আবেদন নিষ্পত্তির পরই তাদের দণ্ড কার্যকর হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অনেক সমালোচকও স্বীকার করেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে দেশটি বহুদিন আগে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো জঙ্গিদের অভয়ারণ্য হতো। জঙ্গিবাদ বাংলাদেশে যে ভয়ংকরভাবে জেঁকে বসেছিল, বঙ্গবন্ধুকন্যার দূরদর্শিতা ও দুর্বিনীত সাহস ব্যতিরেকে তা কোনোভাবেই দমন করা যেত না।