ব্যাশেলেতের সফর ও মানবাধিকার নিয়ে সরকারের কৌশলগত অবস্থান

প্রথম আলো মনজুরুল ইসলাম প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২২, ০৯:১৮

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত গত রোববার থেকে বুধবার বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। চার দিনের সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তা ছাড়া মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তাঁর মতবিনিময় হয়েছে। ব্যাশেলেতের সফরে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো, মানবাধিকারের ইস্যুগুলো নিয়ে তিনি সরকারের মন্ত্রীদের যা বলেছেন, মন্ত্রীরা সাংবাদিকদের কাছে সেটি স্বীকার করেননি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁরা অসত্যও বলেছেন।


সফরের প্রথম দিন রোববার ব্যাশেলেত পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, আইন ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে তাঁর বৈঠকে বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘...এই রকম বলা হয় যে কিছু লোককে কিল করেছে এবং তাদের তথ্য পেলে আমরা নিশ্চয়ই তদন্ত করে দেখব।’ গুমের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘...আমাদের দেশে যেটা হয়, সেটাই আমরা বলেছি। তাদের বলেছি, এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স শব্দ আমাদের দেশে নেই।’ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে গুম নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘৭৬টি গুমের যে কথা এসেছে, সেগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুঁজে দেখেছে। তাতে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।…’ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ব্যাশেলেত উদ্বেগ জানিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘কোনো উদ্বেগ ছিল না…।’


গত বুধবার সফরের শেষ দিন ব্যাশেলেত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তিনি সরকারের কাছে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে জবাবদিহির অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ রকম অবস্থায় তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো সুরাহা করতে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রস্তাবও দেন।


সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া ব্যাশেলেতের বক্তব্য এবং তাঁর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে মন্ত্রীদের দেওয়া বক্তব্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখা যাচ্ছে। ব্যাশেলেত বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রীদের কাছে তাঁর ‘গভীর উদ্বেগের’ কথা জানালেও মন্ত্রীরা সে বিষয়টি স্বীকার করেননি। মন্ত্রীদের মন্তব্যগুলো থেকে এটা পরিষ্কার যে তাঁরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা গুমের সঙ্গে সরকারি বাহিনীগুলোর সম্পৃক্ততা তো দূরের কথা, ঘটনাগুলোই তারা স্বীকার করছেন না।
একইভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টিও আমলে নেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশে অনেক দিন ধরেই এ ধরনের ‘অস্বীকারের সংস্কৃতি’ চালু রয়েছে এবং ক্ষমতাসীনরা মনে করছেন, অস্বীকার করেই হয়তো কোনো ঘটনা বা বিষয় ধামাচাপা দেওয়া যায়। কিন্তু সব ক্ষেত্রে যে এই কৌশল কাজে লাগে না, সংবাদ সম্মেলনে ব্যাশেলেতের দেওয়া বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তা আবারও প্রমাণিত হলো।


আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাশেলেতের সফরটিকে ‘গুরুত্ব’ সহকারে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল সরকার। কিন্তু এই গুরুত্বের মধ্যে মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকার কতটুকু আর সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা কতটুকু, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকার ইস্যুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দুটি বিষয়ে বেশ সমালোচনা ও চাপের মধ্যে রয়েছে। একটি হলো র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কর্মকাণ্ড এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগে র‌্যাব এবং এর কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে নিষেধাজ্ঞাটি দেওয়া হয়। ওই নিষেধাজ্ঞার পর চার মাসেরও বেশি সময় ‘ক্রসফায়ারের’ কোন ঘটনা ঘটেনি বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তরফ থেকে তেমনটা দাবি করা হয়নি। একইভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের সংখ্যা আগের ছয় মাসের তুলনায় উল্লেখেযোগ্যভাবে কমে গেছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও