রাজনীতিকদের বিভ্রান্তি আমাদের হতাশ করছে
লন্ডনপ্রবাসী একজন বাংলাদেশি বন্ধু অনেক দিন পর দেশে এসেছেন। কয়েক দিন আগে তাঁর সঙ্গে দেখা এক রেস্তোরাঁয়। কথা প্রসঙ্গে এক পর্যায়ে বললেন, ‘আপনি তো কাগজে লেখেন। দয়া করে এ দেশের সরকারি ও বিরোধী দুই পক্ষের সম্মানিত নেতাদের বলবেন, প্রতিদিন টেলিভিশনে আমরা যেভাবে তাঁদের বাক প্রতিযোগিতা দেখি তা আরো পরিশীলিতভাবে রাজনৈতিক বক্তব্যে নিয়ে আসা যায় কি না।
আর প্রতিদিনই এত কথা আর পাল্টা জবাব দিতে হবে কেন। কোনো দেশে এমন বাজে সংস্কৃতি আছে কি না আমার জানা নেই। বিদেশে টিভির সামনে বসে আমরা বিব্রত হই। বিশেষ করে ভারতীয় বন্ধুরা নাকি এতে কৌতুকের আনন্দ পান। যখন আমরা প্রবাসে বসে গর্ব করি—মাথাপিছু আয়ে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, শিল্প-কারখানার অগ্রগতি হয়েছে, বড় বড় মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে এ দেশে, নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতুর মতো এমন বিস্ময়কর প্রকল্পও বাস্তবায়ন করতে পারছে বাংলাদেশ—এসব বহির্বিশ্বে আমাদের সম্মান অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন একটি সময়ে দুই পক্ষের নেতাদের ঝগড়ুটে আনস্মার্ট বক্তব্য কাঙ্ক্ষিত নয়। ’
শুধু প্রবাসীর আক্ষেপ নয়, এই আক্ষেপ এখন দলান্ধ নন এমন সব মানুষের। আমাদের চলমান রাজনীতি আর বিবদমান দলগুলোর মুখপাত্রদের বাক্যালাপ, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেশোন্নয়নের সঙ্গে মানাচ্ছে না।
এ সময়ের রাজনীতির হালচাল নিয়ে এবং বিশেষ করে বিএনপি নেতাদের প্রতিদিনকার শব্দচয়নে দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তার জন্ম হচ্ছে। ভুঁইফোড় দল হলেও ২০০৭-এ বিশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার আগ পর্যন্ত বিএনপি সাংগঠনিকভাবে দৃঢ় অবস্থানে চলে এসেছিল। একসময় আশা জাগিয়েছিল দলটি আধুনিক রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু হঠাৎ কাদের প্ররোচনায় দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে তাঁর মৃত্যুর অনেক দিন পর ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ বানানো এবং জাতীয় শোকাবহ দিন ১৫ই আগস্টের মধ্য দিয়ে যে শক্তির সঞ্চয় হচ্ছিল তা থেকে প্রজন্মের দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার জন্য খালেদা জিয়ার নতুন জন্মদিন ঘোষণা করা হলো ১৫ আগস্ট। একজন জাতীয় নেত্রী অমন শোকাবহ দিনে ফিবছর সুসজ্জিত হয়ে সহাস্য বদনে বিশাল বিশাল কেক কাটছেন, এটিও বড় বিব্রতকর বিষয় ছিল। এই তিনটি বিষয় বিএনপিকে আর আধুনিক হতে দিল না।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাজনীতিবিদ
- বিভ্রান্তিকর মন্তব্য