
সিন্ডিকেট-নির্ভর মুমূর্ষু অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা, করণীয় কী?
কোনো গুরুতর অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার মুহূর্তে অ্যাম্বুলেন্স সেবাটা অনেক সময় বড় একটা আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। রাজধানী থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহরগুলোর বড় বড় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের গেইটগুলো অদৃশ্য দুর্গের মতো একদল অসাধু চক্রের দখলে। এই চক্রগুলো অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রোগী ও তাদের অসহায় পরিবারগুলোকে গলাকাটা ভাড়া, বিলম্বিত এবং নিম্নমানের সেবার মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে শোষণ করে আসছে।
নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়হীনতা এবং সুস্পষ্ট নীতিমালার অভাবে গড়ে ওঠা এই ‘অ্যাম্বুলেন্স মাফিয়া’ চক্র একটি জীবনরক্ষাকারী সেবাকে এক শোষণমূলক ব্যবসায় পরিণত করেছে। আমরা যদি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চাই, তবে হাসপাতালগুলোর প্রবেশ মুখে ঘাঁটি গেড়ে বসা এই শোষণমূলক বাজার শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু আসলে করণীয় কী?
রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে প্রযুক্তির ব্যবহার করে কীভাবে একটি দেশের জরুরি স্বাস্থ্যসেবার চিত্র বদলে দেওয়া যায় তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত শ্রীলঙ্কার 'সুওয়া সেরিয়া ১৯৯০ (Suwa Seriya, 1990)' পরিষেবা। এক দশকেরও কম সময় আগে চালু হওয়া এই ব্যবস্থাটি একটিমাত্র জাতীয় জরুরি হটলাইন নম্বরের (১৯৯০) অধীনে পরিচালিত হয়।
যখনই কোনো নাগরিক এই নম্বরে ফোন করেন, কলটি চলে যায় একটি কেন্দ্রীয় কমান্ড সেন্টারে। সেখানে ডিজিটাল ডিসপ্যাচ সিস্টেম এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে রোগীর অবস্থান, রাস্তার যানজট এবং নিকটস্থ অ্যাম্বুলেন্সগুলোর অবস্থান ও প্রাপ্যতা বিশ্লেষণ করা হয়। এর মাধ্যমে সিস্টেমটি নিশ্চিত করে যে রোগীর কাছে সবচেয়ে কাছের অ্যাম্বুলেন্সটি নয় বরং সবচেয়ে দ্রুত পৌঁছাতে সক্ষম অ্যাম্বুলেন্সটি পাঠানো যায়।
এই পরিষেবার সবচেয়ে যুগান্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো এটি দেশের সব নাগরিকের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে লাখ লাখ রোগীকে সেবা দেওয়া এই ব্যবস্থাটি জরুরি স্বাস্থ্যসেবাকে সর্বজনীন করে তুলেছে। এর মাধ্যমে শ্রীলঙ্কা অসহায় রোগীদের জিম্মি করে ব্যবসা করা প্রায় বন্ধ করে ফেলতে পেরেছে।
যখন রাষ্ট্রই বিনামূল্যে উন্নত সেবা নিশ্চিত করে, তখন অসাধু ব্যবসায়ীদের শোষণ করার কোনো সুযোগই আর অবশিষ্ট থাকে না। শ্রীলঙ্কা তাদের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থায়ও বিভিন্ন কৌশলে তা চালু রাখা নিশ্চিত করেছে।
এমনকি পাকিস্তানে ভিন্ন আঙ্গিকে হলেও দুটি অত্যন্ত কার্যকর মডেল চালু করেছে যা সিন্ডিকেটের একচেটিয়া আধিপত্য খর্ব করতে সক্ষম হয়েছে। প্রথমটি হলো 'রেসকিউ ১১২২ (Rescue 1122)' পরিষেবা। এটা কিছুটা আমাদের ৯৯৯ এর মতো। এর মাধ্যমে গড়ে মাত্র সাত মিনিটের মধ্যে জরুরি সাড়া দেওয়া সম্ভব হয় যা বহু জীবন বাঁচাতে সহায়ক।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সিন্ডিকেট
- অ্যাম্বুলেন্স