আসন্ন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তাৎপর্য

যুগান্তর ড. মাহবুব উল্লাহ প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:২৩

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এবার ডাকসুতে ভিপি, জিএসসহ পদ ২৮টি। গত নির্বাচনে (২০১৯) পদ ছিল ২৫টি। এবার ৩টি পদ বাড়ানো হয়েছে। আর প্রতিটি হল সংসদে নির্বাচন হবে ১৩টি পদে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন হল আছে ১৮টি।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডাকসুর ২৮টি পদের জন্য ৫৬৫ জন মনোনয়নপত্র কিনেছেন। আর ১৮ হল সংসদের বিভিন্ন পদের জন্য ১ হাজার ২২৬ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। যাচাই-বাছাই শেষে আজ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।


ডাকসু ও হল সংসদগুলোয় সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে। সে নির্বাচন থেকে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর একজন রাজনৈতিক নেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। ডাকসু ও হল সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদে অতীতে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে বেশ কজন জাতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছেন এবং আজ পর্যন্ত জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। সেজন্যই অনেক সময় বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদগুলো জাতীয় রাজনীতির সূতিকাগার। ২০১৯ সালে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের পর দীর্ঘ ৬ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু কোনো নির্বাচন হয়নি। এখন সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের নির্বাচন বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। তখন নির্বাচন নিয়ে কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কোনো নির্বাচনই যে কারচুপিমুক্ত থাকে না, ২০১৯-এর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন তারই স্বাক্ষর বহন করে। শেখ হাসিনার শাসনকালকে যেসব কারণে ফ্যাসিবাদের কাল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, তার মধ্যে ২০১৯ সালে ডাকসু ও হল নির্বাচনে ছাত্রলীগের হস্তক্ষেপ বিশেষভাবে উল্লেখ্য হয়ে আছে। তারও আগে খোদ মুজিব আমলে ডাকসু নির্বাচনে মুজিববাদি ছাত্রলীগের ভরাডুবি নিশ্চিত জেনে ডাকসুর ব্যালট বাক্স হাইজ্যাক করা হয়। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংসদ নির্বাচনকে কলুষিত করে পুরো নির্বাচনব্যবস্থাকে পরবর্তীকালে কলুষিত করা হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়ার সময়ে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হয়, কিন্তু সেসব নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করতে কোনো হস্তক্ষেপ হয়েছিল বলে জানা যায় না। এরশাদের আমলেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। প্রথাগতভাবে ডাকসু ও হল সংসদগুলো স্টাবলিশমেন্টবিরোধী হলেও এরশাদের আমলে একজন ডাকসু জিএস এরশাদকে সমর্থন প্রদান করেন। অভিযোগ আছে, তাকে অনেক টাকার বিনিময়ে কিনে ফেলা হয়েছিল। পরে এই ব্যক্তি এরশারে মন্ত্রী হন। তিনি জাতীয় পার্টির নেতৃত্বেও বরিত হন। স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশেও বিভিন্ন গণ-আন্দোলন ও গণ-অভুত্থানে ডাকসু ও হল সংসদগুলো গৌরবমণ্ডিত সংগ্রামী ভূমিকা রেখেছে। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির আইয়ুববিরোধী ও শিক্ষা আন্দোলন, চৌষট্টির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে ডাকসু ও হল সংসদগুলো ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে।


পাকিস্তানের ২৩ বছরজুড়ে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। সে সময়কার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও স্বাধিকারের সংগ্রামে ভূমিকা পালন করাই ছিল যুক্তিযুক্ত। ওই সময়ের ছাত্রনেতারা সাধারণ ছাত্রদের ওপর জুলুম-অত্যাচার করেছেন অথবা তাদের মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করেছেন, এমন নজির নেই। তখন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ নামে দুটি বড় ছাত্র সংগঠন ছিল। এ সংগঠন দুটির পূর্ব পাকিস্তানব্যাপী শাখা-প্রশাখা ছিল। এছাড়াও ‘পাকিস্তান ছাত্রশক্তি’ নামে আরেকটি ছাত্র সংগঠন ছিল। এ সংগঠনটি ইসলামি জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী ছিল। তবে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের উগ্রতা ছিল না। পাকিস্তান আমলে সরকার সমর্থক একটি ছাত্র সংগঠন ছিল, যার নাম এনএসএফ বা ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ফেডারেশন। যদিও এ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৫৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগের আতাউর রহমান খান প্রাদেশিক সরকারের কিছু কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করার জন্য, পরবর্তীকালে আইয়ুব-মোনায়েমের ধামাধরা হয়ে পড়ে এটি। কনভেনশন মুসলিম লীগের সরকারকে সমর্থন করতে গিয়ে এরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে হেন অপকর্ম নেই, যা তারা করেনি। তাদের টার্গেট ছিল ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ও সমর্থকরা। কখনো কখনো ছাত্রলীগও তাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। তাদের গণবিরোধী চরিত্র নিয়ে অনেক কথা বলার থাকলেও এই কলামের পরিসরে সেসব আলোচনার সুযোগ নেই। তারা মূর্তিমান ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল রাষ্ট্রীয় মদদে। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ সংগঠনটি বিলুপ্তির পথে চলে যায়।


বর্তমান ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন হচ্ছে ২০২৪-এর মহান গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পর। এ অভ্যুত্থানের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ কেমন ছিল, তা কারও অজানা নয়। গণরুম ও গেস্টরুমের অত্যাচার এবং ছাত্রলীগের মিছিলে যেতে বাধ্য করা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে পারত না। ভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে জানলে ছাত্রলীগ অন্য ছাত্রদের ওপর নানা রকম জুলুম-নির্যাতন চালাত। দেশবাসী নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি, ছাত্রলীগের নেতাদের প্রতি সমীহ না করার কারণে এক ছাত্রকে শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় এবং তার ওপর দৈহিক নির্যাতন চালানো হয়। এ দুর্ভাগা ছাত্রটি ছিল একজন দরিদ্র লোকের সন্তান। ছাত্রলীগের মাস্তানদের প্রহার ও শীতের ঠান্ডায় ছাত্রটির মৃত্যু ঘটে। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি হলেও কোনো বিচার হয়নি। তার অসহায় পিতা-মাতার অভিশাপ বর্ষিত হয়েছে শেখ হাসিনা ও তার দলবলের ওপর।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও