বিভাজন নয়, ঐক্য জরুরি

যুগান্তর মো. ইলিয়াস হোসেন প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:২০

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আজ এক নতুন সংকটের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। একদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারমুখী ঘোষণা, অন্যদিকে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ-এ দুই বিপরীত স্রোতের মধ্যে দেশ এগোচ্ছে সরকারঘোষিত ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের দিকে।


প্রিয় পাঠক, আপনারা জানেন, এ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ ছিল রাষ্ট্র সংস্কার, বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত সব গুম, হত্যা ও নির্যাতনের বিচার এবং সবশেষে প্রতিযোগিতামূলক, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ একটি নির্বাচনের আয়োজন করা। সরকার সেই লক্ষ্যে কয়েকটি সংস্কার কমিটিও গঠন করেছে এবং বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক কিছু বিষয়ে সংশোধনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও গঠন করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত দ্বিধাবিভক্ত হওয়া, বিশেষ করে সংখানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতির অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বড় দলের সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছতে না পারায় সার্বিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। নবগঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টিসহ (এনসিপি) বেশ কয়েকটি দলের সংখানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনে আগ্রহের ফলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত নির্বাচন আয়োজন নিয়েও জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ‘জুলাই সনদ’-এর মাধ্যমে ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্যের রূপরেখা ঘোষণা করেছে। এতে সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসাবে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন ও গণমাধ্যমের জন্য পৃথক পৃথক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। এগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই নির্বাচন হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।


এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ-সংগঠনের ওপর সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে আওয়ামী লীগ নির্বাসিত হয়। তাদের নিবন্ধনও স্থগিত করা হয়। এতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আংশিক স্বস্তি পেলেও নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে তাদের বেশ সংশয় রয়েছে। এছাড়াও বর্তমান সরকারের ভেতরে থাকা কিছু অদৃশ্য প্রক্রিয়া মূলধারার রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যে দলটি দীর্ঘদিন নির্বাচনি প্রক্রিয়া থেকে সরাসরি বিচ্ছিন্ন ছিল, তারা বর্তমানে প্রশাসনিক ও সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার দৌড়ে এক নতুন সুযোগ পেয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের শিথিল রাজনৈতিক পরিবেশ, প্রশাসনের কিছু কৌশলগত পদে তাদের সহানুভূতিশীল কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে তাদের পদচারণা রাজনৈতিক মাঠে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এসব দল অন্তর্বর্তী সরকারের নীরব প্রশ্রয়ে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে, যা নির্বাচনি প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।


এখানে উল্লেখ্য, নির্বাচনের বৈধতা শুধু ভোটের দিনের নিরাপত্তা বা উপস্থিতি দিয়ে নির্ধারিত হয় না, বরং প্রতিযোগিতার মান, প্রার্থীদের বহুমাত্রিকতা ও ভোটারের আস্থা দিয়ে মাপা হয়। বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষায় আছেন, তারা দেখতে চাইছেন, নির্বাচনের পর সরকার কতটা শক্তিশালীভাবে গঠিত হয় এবং বিভিন্ন সিদ্ধান্ত/নীতির ক্ষেত্রে কতটা ধারাবাহিকতা থাকে। মনে রাখতে হবে, নির্বাচন-পূর্ব অনিশ্চয়তা গ্রামীণ অর্থনীতিকেও স্থবির করতে পারে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য ও নির্মাণ খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


এ অবস্থায় বিএনপি ছাড়া এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামী দল দেশের সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির অন্তর্ভুক্তি নিয়ে যে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছে, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে। এতে একপক্ষ নির্বাচনের তারিখ পেছানোর এবং অন্যপক্ষ আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন চাইছে। ফলে ঘোষিত তারিখে নির্বাচন আয়োজন অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে। কারণ, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল চাইছে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন হয়ে যাক। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর এ দ্বিমুখী অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে আগামী দিনে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সহিংসতার ঝুঁকি বাড়বে। অপরদিকে, দেশের এ সংকটময় মুহূর্তে সব দলের অংশগ্রহণে যদি একটি নির্বাচন আয়োজন করা যায় এবং এতে বিএনপি ও অন্যান্য বড় দল অংশ নেয়, তাহলে নির্বাচনি প্রতিযোগিতা তীব্র হবে, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে এবং অন্তর্বর্তী সরকার সফলতার দাবিদার হবে। আর যদি বিরোধী পক্ষ বড় আকারে অনুপস্থিত থাকে, তবে নির্বাচনের ফলাফল দ্রুত ঘোষিত হলেও তা অস্থিরতা ও আন্তর্জাতিক সমালোচনা ডেকে আনবে বলে অনেকেই মনে করে।


এসব বাস্তবতা মাথায় নিয়েই অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে এবং এ বছর ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সংঘাতমুক্ত রাখতে নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় আট লাখ পুলিশ, আনসার ও সেনাসদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এবারের ভোটে প্রবাসী ভোটার ও প্রথমবারের ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়াগত সংস্কার আনার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।


প্রিয় পাঠক, গত ১৭ বছরে একটি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সবার গ্রহণে একটি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য কত মানুষকে গুম, হত্যা এবং নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, তা আমরা সবাই জানি। ওইসব নিগৃহীত মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে গড়ে ওঠা জুলাই ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান এবং ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন দেশের জনগণের কাছে একটি স্পর্শকাতর বিষয়। তাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত আগামী ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রায় এক নির্ণায়ক মোড়। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত রোডম্যাপ কাগজে-কলমে প্রশংসনীয় হলেও তার সফলতা নির্ভর করছে দুটি বিষয়ের ওপর : সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং প্রতিশ্রুত সংস্কারের বাস্তবায়ন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও