You have reached your daily news limit

Please log in to continue


ভারত কি শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড এবং তাকে ভারতের হস্তান্তর করার প্রশ্নটি শুধু একটি বিচারসংশ্লিষ্ট ঘটনা নয়; এটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি, ঐতিহাসিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য এবং রাষ্ট্র পরিচালনার নৈতিকতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশজুড়ে যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়েছিল, তা মূলত সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পুনঃপ্রবর্তনের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। কিন্তু খুব দ্রুতই এ আন্দোলন দেশের দীর্ঘদিনের দমননীতি, দুঃশাসন, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির বিরুদ্ধে একটি সর্বাত্মক বিদ্রোহে রূপ নেয়। সরকারি বাহিনী আন্দোলন দমনে কঠোর ও প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগ করে, যার ফলে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। আন্তর্জাতিক মহলসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত হয় এবং আরও কয়েক হাজার আহত হয়। এতে দেশজুড়ে অসন্তোষ আরও তীব্র আকার ধারণ করে। দেশের ইতিহাসে এত বৃহৎ ও রক্তাক্ত অভ্যুত্থান খুব কমই দেখা গেছে।

এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। অভিযোগ ছিল, একজন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ব্যর্থ হন, বরং বহুক্ষেত্রে সহিংসতা উসকে দেন এবং হত্যাযজ্ঞ ঠেকাতে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। বিচারিক প্রক্রিয়া ঘিরে অনেক বিতর্ক থাকলেও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার একে রাষ্ট্রের কাছে সত্য উদ্ঘাটনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে উল্লেখ করেছে। তাদের বক্তব্য, এ রায় প্রমাণ করেছে, রাষ্ট্রক্ষমতা যাদের হাতে থাকুক না কেন, তারা আইনের ঊর্ধ্বে নন। অন্যদিকে শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে তার প্রতিক্রিয়ায় রায়টিকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে দাবি করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ট্রাইব্যুনাল তার প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট ছিল এবং তাকে আইনজীবী নিয়োগ বা আত্মপক্ষ সমর্থনের যথাযথ সুযোগ দেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চেয়ে নিজের নির্দোষিতার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। তার রাজনৈতিক অনুসারীরা এ রায়কে প্রতিশোধমূলক বিচার বলে আখ্যা দেয় এবং দাবি করে, ২০২৪ সালের পরিবর্তন ছিল একটি ‘বেআইনি ক্ষমতা দখল’; তাই নতুন সরকারের অধীনে হওয়া বিচারকে নিরপেক্ষ বলা যায় না।

রায় ঘোষণার পরপরই ঢাকা আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লির কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর দাবি জানায়। ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত প্রত্যর্পণ চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ যুক্তি দেয় যে দণ্ডিত আসামিকে আশ্রয় দেওয়া বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিপন্থি। বিশেষ করে ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা যখন আতঙ্কিত অবস্থায় ভারতের সুরক্ষায় আশ্রয় নেন, তখন থেকেই তার অবস্থান দুদেশের সম্পর্কে নতুন জটিলতার সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে, বিচার সম্পন্ন করতে ভারতের ভূমিকা অপরিহার্য; অন্যথায় দিল্লির অবস্থানকে অমিত্র আচরণ হিসাবে দেখা হবে। ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল এক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক ও কৌশলগত। দিল্লি প্রকাশ্যে খুব সংযত ভাষায় বলেছে যে, তারা রায় ‘নজরে নিয়েছে’ এবং পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু এর বাইরে তারা কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। ভারতীয় কূটনীতিক, আইনজ্ঞ এবং নীতিনির্ধারকদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী প্রত্যর্পণ চুক্তির ধারা ভারতকে পর্যাপ্ত স্বাধীনতা দিয়েছে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার জন্য। বিশেষত, যদি কোনো মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে হয়, অথবা অভিযুক্তের প্রাণহানির ঝুঁকি থাকে, কিংবা বিচার প্রক্রিয়াকে ন্যায্য মনে না হয়, তবে ভারত তাকে ফেরত পাঠাতে বাধ্য নয়। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে এই তিনটি উদ্বেগই বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য।

২০১৩ সালের বাংলাদেশ-ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তিতে একটি বড় দুর্বলতা ছিল। এতে বলা হয়েছিল যে, যদি মামলা ‘রাজনৈতিক’ প্রকৃতির হয়, তবে আসামিকে ফেরত না দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু পরে এ চুক্তি সংশোধন করে স্পষ্ট করা হয়, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি নির্দিষ্ট অপরাধের অভিযোগ ও গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকে, তবে তাকে ফেরত দেওয়া বাধ্যতামূলক। এ সংশোধনই দেখায় যে অপরাধকে রাজনৈতিক আড়ালে লুকানোর সুযোগ নেই। অতএব, ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা দিল্লির জন্য আন্তর্জাতিক আইন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং সুসম্পর্ক রক্ষার স্বার্থে জরুরি। একজন ব্যক্তিকে রক্ষা করার জন্য ভারত-বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব, কৌশলগত সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক সমন্বয়কে ঝুঁকির মুখে ফেলা উচিত নয়। দুদেশের স্থায়ী সম্পর্ক রক্ষাই এখন ভারতের দায়িত্ব।

ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও ইতিহাসও এ সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করছে। শেখ হাসিনা ভারতের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। উগ্রপন্থি গোষ্ঠীর দমন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবিলায় সহযোগিতা, আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্পে সমর্থন, পানি ও সীমান্ত-সম্পর্কিত সমঝোতা-এসব বিষয়েই তিনি দিল্লির জন্য দীর্ঘ মেয়াদে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসাবে বিবেচিত হয়েছেন। ভারতের অনেক নীতিনির্ধারক মনে করেন, এমন একজন নেতা, যিনি বহু বছর ভারতের স্বার্থরক্ষায় ভূমিকা রেখেছেন, তাকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য ফেরত পাঠানো ভারতের নৈতিক ও কৌশলগত অবস্থানকে দুর্বল করবে। তাছাড়া ভারতের ভাবমূর্তি, বিশেষত মিত্রদের প্রতি আনুগত্যের প্রশ্নে, ক্ষুণ্ন হতে পারে।

বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কও খুব উষ্ণ নয়। নতুন সরকার ভারতের বলা মতো নয়; বরং তারা ভারতের আগের প্রভাবশালী ভূমিকার সমালোচনা করেছে বেশ কয়েকবার। দিল্লি ধরে নিচ্ছে, ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতেই পারে। এমন অবস্থায় ভারতের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ কৌশল হলো, প্রত্যর্পণের বিষয়ে সময়ক্ষেপণ করা এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। বাংলাদেশের জনগণের বড় একটি অংশের চোখে শেখ হাসিনার বিচার ও দণ্ডায়ন ছাত্র-জনতার রক্তের প্রতিশোধের প্রশ্নে এক নৈতিক বিজয়। তারা মনে করে, হাজারো নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানির জন্য দায়ী নেত্রীকে বিচারাধীন রাখা এবং দণ্ড কার্যকর করাই ন্যায়বিচারের পূর্ণতা। তাই তারা ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরছে। অন্যদিকে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করা কৌশলগত আনুগত্যের পাশাপাশি মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক বিচারমানদণ্ডের প্রশ্নে এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষা। এ দুদেশের ভিন্ন ভিন্নস্বার্থই বর্তমানে সম্পর্ককে নতুন উত্তেজনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন