You have reached your daily news limit

Please log in to continue


শিক্ষকেরা আস্থা হারিয়েছেন সমাজের

গৃহশিক্ষকেরা গৃহে থাকেন না, তবে আসেন তাঁরা গৃহে। নতমুখে আসেন, আরও নত হয়ে ফেরত যান। ছাত্র কিংবা ছাত্রীর সঙ্গে আনন্দহীন আদান-প্রদান শেষে বিদ্যার বোঝাটা কিছুটা হালকা, গ্লানির বোঝাটা কিছু ভারী করে ফিরে যান আপন গৃহে।

কিন্তু এই চিত্র ঠিক হলো কি? অনেকে বলবেন, এমন গৃহশিক্ষক জানা আছে তাঁদের, যাঁরা ঝকঝকে তকতকে, যাঁরা সেই যে সনাতন ভাবমূর্তি গৃহশিক্ষকের—মলিন ছাতা, ম্রিয়মাণ বেশবাস, ক্ষীয়মাণ স্বাস্থ্য সেই মূর্তিকে রীতিমতো ধিক্কার দেন। তাঁদের আয় ও ব্যয় রীতিমতো ঈর্ষণীয়। তা আছে বৈকি, থাকবে ঠিকই। অসাম্য যে-সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য, সেখানে পদে পদে বৈষম্য ঘটবে, এতে আর আশ্চর্য কি। ব্যবধান আছে। আছে ইতরবিশেষ, শহরে মফস্বলে তফাত, বিষয়ে বিষয়েও হেরফের, যেমন আগে ছিল ইংরেজির কদর বেশি, এখন দাম বেড়েছে বাণিজ্যের, যুগ যদিও বিজ্ঞানের, কিন্তু বাণিজ্য বিভাগ বিজ্ঞানকে অতিক্রম করে গেছে। কিন্তু বড় যাঁরা, তাঁরাই বা কত বড়? ছোট অবশ্যই ছোট, অভিভাবকদের তুলনায়। অভিভাবকেরা মালিক

এ ক্ষেত্রে। তাঁরা বেতন দেন। অনেক অভিভাবক নিশ্চয় আছেন, গৃহশিক্ষককে যাঁরা ঠিক গৃহভৃত্য হিসেবে দেখেন না, বেশ সম্মান করেন, নাশতাপানি সরবরাহ করেন উচিতমতো, ‘স্যার’ বলে ডাকেনও, এমনকি পৌঁছে পর্যন্ত দেন পারিবারিক শকটে। কিন্তু যতই যা করুন, গৃহেই নিয়োজিত তো, গৃহের সেবক, ব্যক্তিগত বেতনভুক্ত। মনোপলি শিক্ষক মনোপলি ব্যবসায়ীর মতোই অল্প কজন; বেশির ভাগ শিক্ষকই ছোট দোকানদার, যেন ফেরিওয়ালা, ছাত্র-ছাত্রী খুঁজে খুঁজে বার করেন, ভালো অভিভাবক খোঁজেন, অন্তত মনে মনে।

মানতেই হবে যে কোচিং সেন্টার এবং গৃহশিক্ষকতার প্রচলন দিন দিন বাড়ছে বৈ কমছে না। আগের দিনেও ছিল গৃহশিক্ষকতা, কিন্তু এমন ব্যাপক হারে ছিল না। সম্পন্ন গৃহীরা; বিশেষ করে শহরাঞ্চলে, গৃহশিক্ষক রাখতেন। অনেক সময় গৃহেই থাকতেন তাঁরা, বলা হতো জায়গির থাকেন। ছিলেন তাঁরা আবাসিক শিক্ষক। তাঁদের বয়স হতো অল্প, মেধা থাকত স্বীকৃত, হতেন তাঁরা উচ্চাভিলাষী এবং অবশ্যই ছাত্র ছিলেন তাঁরা নিজেরাও। সম্পর্কটা পুঁজিবাদী নয়; ফেলো কড়ি মাখো তেলের নয়; অনেকটা সামন্তবাদী। একান্নবর্তী পরিবারের একজন সদস্যই হয়ে উঠতেন তাঁরা। বহিরাগত নিশ্চয়ই, তবে অপরিচিত তো নয়। কখনো কখনো আরও কাছে আসতেন চলে, প্রবেশ করতেন ভেতর বাড়িতে, স্থাপিত হতো বৈবাহিক সম্পর্ক। তাঁদের মধ্য থেকে অনেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন এবং গৃহস্বামীরা সাক্ষ্য দেবেন, কেউ কেউ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন উচ্চাসনে।

এখন সেই কেতা কেবল কাত নয়, বিলোপের পথেই চলে গেছে। সমাজ সামন্তবাদী সম্পর্কের ওপর পুঁজিবাদী সম্পর্কের বিজয়াভিযানের একটা নির্ভরযোগ্য চিহ্ন হচ্ছে এই আবাসিক শিক্ষক নামক প্রতিষ্ঠানের বিনাশ, এবং তার জায়গায় গৃহশিক্ষক নামক প্রতিষ্ঠানের সংস্থাপন। মনস্তাত্ত্বিকেরা বলতে পারতেন, আবাসিক শিক্ষকতা শিক্ষা ও শিক্ষাদাতা উভয়ের ওপর কোন কোন প্রতিক্রিয়া রেখে গেছে। আমার নিজের ধারণা, এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীকে যতটা নয়, শিক্ষককে প্রভাবিত করেছে তার চেয়ে বেশি।

বলা যাবে এবং বললে মিথ্যে হবে না কথাটা যে বিদ্যা এখন আরও অনেক কিছুর মতো পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেনাবেচা চলছে প্রকাশ্য বাজারে। বিক্রেতার আনন্দ নেই, ক্রেতারও নেই কৃতজ্ঞতা। শিক্ষক এখন আর দাতা নন, এখন তিনি বিক্রেতা। বিদ্যা বিক্রয় করছেন সর্বোচ্চ মূল্যে। কিন্তু আসলেই কি পণ্য বিক্রি করেন একজন গৃহশিক্ষক? না, ঠিক পণ্য নয়, বিক্রি করেন সেবা। তাঁকে ফেরিওয়ালা বলা ঠিক হবে না, বলতে হবে সেবক, যেমন সেবক একজন চিকিৎসক অথবা একজন উকিল।

কিন্তু এই যে মন্তব্য আমরা করছি, কিংবা করতে চাইছি, এর মধ্যে যদি প্রচ্ছন্ন থাকে কোনো নিন্দাভাষণ, তবে সেটা হবে অন্যায় ও নিন্দনীয়। শিক্ষকেরাও মানুষ, এই সমাজেরই মানুষ। তাঁদেরও চাল-ডালের দরকার হয়। তাঁদের ছেলেমেয়েদেরও লেখাপড়া আছে, আছে ঈদের জামাকাপড়। সর্বোপরি ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হয় তাঁদেরকেও। আর সে কারণে নিজেরা অন্যের গৃহে শিক্ষকতা করার সঙ্গে সঙ্গে কেউ কেউ আবার নিজেদের গৃহের জন্য গৃহশিক্ষক রেখে থাকেন। অপেক্ষাকৃত কম মহার্ঘ গৃহশিক্ষক রাখেন। যেন বড় ডাক্তার বাড়িতে আনছেন ছোট ডাক্তারকে। বোঝা যায়, বিদ্যার ওপর ঠিক আস্থা রাখেন না, আস্থা রাখেন অর্থের ওপর। বিদ্যার চেয়ে অর্থ বড় না হলে নিজের ছেলেমেয়েদের জন্য বিদ্যা-সংগ্রহের পরিবর্তে অর্থ-সংগ্রহে মনোযোগী হতেন না।

গৃহশিক্ষকতার ব্যাপক প্রচলন কিন্তু পুঁজিবাদী সম্পর্কের দিকে সামাজিক অগ্রগতিই শুধু বোঝায় না, বোঝায় আস্থাহীনতাও। আস্থা যাচ্ছে নেমে। কিসের ওপর আস্থা? আস্থা ব্যবস্থার ওপর। ছেলেমেয়েদের আমরা স্কুলে পাঠাই, কিন্তু মোটেই বিশ্বাস করি না যে সেখানে যথোপযুক্ত বিদ্যানুশীলন ঘটছে। যেমন করে হাসপাতালের ওপর লোকের আস্থা কমে যাওয়াতে ব্যাপকতা লাভ করেছে ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস, ঠিক তেমনিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থাহীনতাতেই ব্যাপক হারে প্রচলন ঘটেছে কোচিং সেন্টারের। অবশ্য ডাক্তারের স্থান কিছুটা উঁচুতে, তদুপরি তাঁর কাছে লোকে যায় বিপদে পড়লে। উকিলের কাছেও তেমনি; যে জন্য ডাক্তার বা উকিলকে লোকে ডেকে বাসায় আনে না, আনলেও আনে অত্যন্ত বেশি ভাগ্যবানেরা; কিন্তু গৃহশিক্ষকদের বাসায় আনা হয়, আনা যায় সহজে এবং তাঁরা ব্যগ্রও থাকেন আসতে। শিক্ষকদেরকে অপরিহার্য মনে করা হয় না কখনো, যেমনভাবে ডাক্তার বা উকিলকে করা হয়। শিক্ষকতা যে কেউ পারেন; বিপরীতপক্ষে, ডাক্তারের কাজ বিশেষজ্ঞের, ওকালতিও তাই। এই রকম মনে করা হয়। ধারণা করা হয় যে বেচারারা শিক্ষক হয়েছেন অন্য কিছু না হতে পেরেই। পারলেই আমলা হতেন, ব্যবসায়ী হতেন, ডাক্তার হতেন, উকিল হতেন, যেমন আমরা অধিকতর সফল মানুষেরা হয়েছি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন