শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৌচাগার ব্যবস্থাপনার চিত্র
বিশ্বজুড়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্যানিটেশন এবং সঠিক টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯ নভেম্বর বিশ্ব টয়লেট দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে দিনটি। ২০০১ সালে ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক সিম এ দিবস পালনের উদ্যোগ নেন। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে সবার জন্য পরিচ্ছন্ন শৌচাগার থাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আমাদের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত টয়লেট নেই এবং যেগুলো আছে, সেগুলোও ব্যবহারের উপযোগী নয়। এ কারণে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেগুলো ব্যবহার করতে পারে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্ধেক টয়লেট বন্ধ করে রাখা হয়। প্রয়োজনের তুলনায় টয়লেটের সংখ্যা কম থাকে; বিশেষ করে ছাত্রীদের জন্য আলাদা এবং পর্যাপ্ত টয়লেট না থাকার অভিযোগ রয়েছে। অনেক সময় টয়লেটগুলো মেরামত করা হয় না কিংবা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয় না। সে কারণে টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
গ্রাম কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলেই কেবল নয়, রাজধানীর অনেক নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও স্যানিটেশনের সমস্যা রয়েছে। এসব স্কুলে উন্নত শৌচাগার থাকলেও নিয়মিত যত্ন এবং দেখভালের অভাবে সেগুলো ব্যবহারের উপযোগী থাকে না। তখন শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবে এগুলোর ব্যবহার এড়িয়ে চলে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান তিন-চারতলাবিশিষ্ট হলেও প্রতি তলায় শৌচাগার নেই। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অন্য তলায় গিয়ে প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয়। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শৌচাগার থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষার সুযোগ থাকে না।
২০১৪ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের পলিসি সাপোর্ট ইউনিটের উদ্যোগে এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় আইসিডিডিআরবি বাংলাদেশ জাতীয় ভিত্তিমূল জরিপ (ন্যাশনাল হাইজিন বেসলাইন সার্ভে) পরিচালনা করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি চর্চার বিষয়ে ধারণা পেতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জরিপ করা হয়।
জরিপে দেখা গেছে, ৮৪ শতাংশ স্কুলে উন্নত এবং ১২ শতাংশ স্কুলে অনুন্নত ল্যাট্রিন আছে। স্কুলগুলোর ৫৫ শতাংশ ল্যাট্রিনে তালা দেওয়া থাকে। খোলা ল্যাট্রিনগুলোর মধ্যে মাত্র ২৪ শতাংশ ব্যবহার করার উপযোগী। ৮০ শতাংশ স্কুলে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ল্যাট্রিনের কাছাকাছি হাত ধোয়ার জন্য পানির ব্যবস্থা আছে মাত্র ৪৫ শতাংশ স্কুলে। পানি, সাবানসহ হাত ধোয়ার ব্যবস্থা আছে এক-তৃতীয়াংশ স্কুলে। ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য প্রতি মাসে স্কুলগুলো গড়ে খরচ করে মাত্র ৬১ টাকা।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কিশোরীদের জন্য পিরিয়ড একটি দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে শুধু ৬ শতাংশ ছাত্রী স্কুল থেকে জানতে পারে। আর ১১ শতাংশ স্কুলের ছাত্রীদের জন্য আলাদা টয়লেট আছে। কিন্তু পিরিয়ড ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা আছে মাত্র ৩ শতাংশ স্কুলে। তাই ৮৬ শতাংশ ছাত্রী পিরিয়ডের সময় স্কুলে আসতে চায় না। ৪০ শতাংশ ছাত্রী এ সময় গড়ে তিন দিন পর্যন্ত স্কুলে অনুপস্থিত থাকে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- শৌচাগার
- বিশ্ব টয়লেট দিবস